জিয়া লাইব্রেরি ডেস্ক : একজন রাষ্ট্রপতি হিসেবে তিনি কেমন ছিলেন? কেমন ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা ও রাজনীতিক হিসেবে?
চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে ১৯৮১ সালের ৩০ মে কিছু বিপথগামী সেনার হাতে শাহাদতবরণের পর জাতীয় সংসদে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা করতে গিয়ে জিয়াউর রহমানকে মূল্যায়ন করেছেন সে সময়কার দেশের শীর্ষ রাজনীতিকরা। তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা আওয়ামী লীগের আছাদুজ্জামান খান বলেছিলেন, মরহুম জিয়াউর রহমান একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ২৬ মার্চ তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন, জাতি সেটা স্মরণ করবে।
তখনকার গণতন্ত্রী পার্টির এমপি ও বর্তমানে আওয়ামী লীগ নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছিলেন, জিয়াউর রহমানের জানাজায় অংশ নিয়ে লাখ লাখ জনতার স্রোত তাতে শ্রদ্ধা জানিয়েছে। তার প্রতি গোটা বাংলাদেশের মানুষ তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছে। তাতে প্রমাণিত হয়েছে, তিনি বাংলাদেশের মানুষের কত কাছাকাছি এবং প্রাণপ্রিয় ছিলেন। এটা বলতে কেউ কুণ্ঠাবোধ করলে মনে করব, তার মানসিক দৈন্য ও রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব রয়েছে।
রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছিলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার পরিচয়। তাকে সেভাবেই দেখেছি, সেভাবেই সম্মান করেছি। তার যে কীর্তি সেই কীর্তি অমর এবং অক্ষুণ্ন থাকুক—এটা কামনা করি।’
ন্যাপের প্রফেসর মোজাফফর আহমদ বলেছিলেন, জিয়াউর রহমান একজন দৃঢ়চেতা, সত্ ও দেশপ্রেমিক মানুষ ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি জীবন বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন এবং রেডিও মারফত স্বাধীনতার বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। আমি ঢাকা শহরে আত্মগোপন অবস্থায় ছিলাম। তখন রেডিও মারফতই তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়।’ এমনিভাবে কেউ বললেন জিয়াউর রহমান একজন গ্রেট লিডার বা মহান নেতা ছিলেন। কেউ বললেন তিনি বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ জাগিয়ে তুলেছেন। বহুদলীয় রাজনীতি চালু করেছেন। দেশের জন্য দিবারাত্রি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন। সাদাসিধা সরল জীবনযাপন করেছেন তিনি।
জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার চার দিনের মাথায় দ্বিতীয় জাতীয় সংসদের সপ্তম অধিবেশনের অষ্টম বৈঠকে তত্কালীন স্পিকার মির্জা গোলাম হাফিজ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। এই শোক প্রস্তাব সংসদে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। এর আগে সংসদের সরকারি ও বিরোধী দলসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মোট ১৩ জন সংসদ সদস্য জিয়াউর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে বক্তব্য দেন। তারা জাতির সামনে তুলে ধরেন জিয়াউর রহমানের অমর কীর্তি।
১৯৮১ সালের ৩ জুন সকাল সাড়ে ১০টায় সংসদের বৈঠক শুরু হয়। কোরআন তেলাওয়াতের পর স্পিকার গোলাম হাফিজ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন। ওইদিন সব কার্যসূচি স্থগিত রেখে শোক প্রস্তাবের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সরকারি, বিরোধী দল ও অন্যান্য রাজনৈতিক যেসব সদস্য বক্তব্য দেন, তারা হলেন সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শাহ আজিজুর রহমান, বিরোধীদলীয় নেতা আছাদুজ্জামান খান, মুসলিম লীগ সংসদীয় দলের নেতা খান এ সবুর, জাসদ নেতা শাজাহান সিরাজ, আইডিএল নেতা মাওলানা আবদুর রহীম, ড. মো. ওসমান গনি, আতাউর রহমান খান, আওয়ামী লীগ (মিজান) নেতা মিজানুর রহমান চৌধুরী, রফিকউল্লাহ চৌধুরী, ন্যাপপ্রধান অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, রাশেদ খান মেনন ও মোহাম্মদ তোয়াহা। জিয়াউর রহমানকে নিয়ে প্রায় আড়াই ঘণ্টা সংসদে আলোচনা হয়। পরে মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করে দোয়া মোনাজাত অনুষ্ঠিত হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন তত্কালীন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী আবদুর রহমান। উল্লেখ্য, শোক প্রস্তাবের দিনের পরেও ওই অধিবেশনের বিভিন্ন কার্যদিবসে সংসদে সম্পূরক বাজেট ও মূল বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনাকালে বেশিরভাগ সংসদ সদস্য শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করেন। শোক প্রস্তাবের দিন যেসব সংসদ সদস্য আলোচনায় অংশ নেন তাদের কয়েকজনের বক্তব্যের উল্লেখযোগ্য কিছু অংশ পাঠকদের জন্য সংসদ কার্যবিবরণী থেকে তুলে ধরা হলো :
শোক প্রস্তাবে স্পিকার মির্জা গোলাম হাফিজ বলেন, মরহুম জিয়াউর রহমান ছিলেন বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে গণতান্ত্রিক চেতনাবোধ জাগিয়ে তোলার একজন অক্লান্ত কর্মী ও নিবেদিতপ্রাণ। ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা সুসংহত ও দেশের গণতন্ত্রকে সুদৃঢ় করার নিমিত্তে তিনি ১৯৭৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সারাদেশে সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে দেশের জাতীয় সংসদ প্রতিষ্ঠা করেন এবং সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে তিনি পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজির স্থাপন করেন। সামরিক অফিসার হয়েও গণতন্ত্রের প্রতি তার গভীর আস্থা ছিল এবং তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতেন জনগণই ক্ষমতার উত্স। তিনি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের মূলমন্ত্রে দেশের নয় কোটি মানুষকে সুসংগঠিত করেন। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে এক সম্মানজনক বিশিষ্ট আসনে অধিষ্ঠিত করেন।
স্বাধীনতা যুদ্ধের বীর মুক্তিযোদ্ধা, স্বাধীনতার অতন্দ্র প্রহরী, গণতন্ত্রের সাধক, অকৃত্রিম দেশপ্রেমিক মরহুম জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে বিশিষ্ট আসন লাভ করে আছেন। তার মহান নেতৃত্ব আত্মপ্রত্যয়ের অনুপ্রেরণা, স্বনির্ভরতার সঠিক পথপ্রদর্শন দেশ পুনর্গঠনের আহ্বান এবং স্বাধীনতার ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার সংগ্রামী ইতিহাসে তিনি চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন। তিনি অসাধারণ বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন ব্যক্তিত্ব, বর্তমান বিশ্বের অন্যতম বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুসন্তান ছিলেন।তত্কালীন বিরোধীদলীয় নেতা ময়মনসিংহ-১৮ আসনের নির্বাচিত সংসদ সদস্য আছাদুজ্জামান খান তার বক্তব্যে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মন নিয়েই এখানে বক্তব্য রাখতে হচ্ছে। আজকে মরহুম জিয়াউর রহমান সাহেব আমাদের মধ্যে নেই। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, জনাব স্পিকার। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন। জাতি সেটা স্মরণ করবে।বাংলাদেশ জাতীয় লীগের সভাপতি আতাউর রহমান খান (ঢাকা-১২) বলেন, হৃদয় আজকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত, বেদনাহত, শোকসন্তপ্ত। কোনো কথা বলার ভাষাই খুঁজে পাচ্ছি না—কী করে এই মর্মবেদনা প্রকাশ করতে পারব। মরহুম জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিগত যোগাযোগ ছিল বলেই আমি অত্যন্ত পীড়িতবোধ করছি এবং অত্যন্ত শোকাভিভূত হয়েছি। এই সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধার ওপর নির্ভর করেছিল, পারস্পরিক স্নেহের ওপর নির্ভর করেছিল এবং তার এমন একটা সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছিল, যা কোনোদিন বিনষ্ট হওয়ার নয়।
তিনি বলেন, মরহুম জিয়াউর রহমান সহজ-সরল নিরলস জীবনযাপন করেছেন, নিরাড়ম্বর জীবনযাপন করেছেন। মানুষকে ভালো বেসেছেন এবং বাংলার জনগণের সঙ্গে তিনি একাত্মতা ঘোষণা করে তাদেরই একজন হয়েছিলেন। সাধারণ মানুষ মনে করত, জিয়াউর রহমান আমাদেরই মতো একজন সাধারণ মানুষ। তাকে তারা নিজেদের করে নিয়েছিল। এই গুণ সাধারণত অনেক নেতার মধ্যে পাওয়া যায় না। যার মধ্যে পাওয়া যায়, তিনি সত্যিকার অর্থে দেশের নেতা হতে পারেন।
এ কারণে তিনি আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটা গভীর শ্রদ্ধা অর্জন করেছিলেন। গোটা দেশের মানুষ তাকে ভেবেছিল, তিনি তাদেরই একজন। তাদের কথাই তিনি বলে যাচ্ছেন। মানুষকে তিনি উত্সাহিত করেছেন, মানুষকে তিনি উদ্বুদ্ধ করেছেন। মানুষের আলস্য দূর করার চেষ্টা করেছেন। একদিন একজন ইঞ্জিনিয়ার আমাকে বলেছিলেন, ‘আমি একদিন তাকে বললাম, স্যার, খাল কাটছি কিন্তু এতে হৈ-হৈ না করে ধীরে-সুস্থে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় আমাদের এসব করতে দিন। একটু সময় নিয়ে করুন।’ তিনি হঠাত্ করে বলে ফেললেন, না সময় নেয়ার দরকার নেই। হৈ-হৈ করেই তো করতে হবে। তা না হলে মানুষের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য কী করে আসবে? ইঞ্জিনিয়ার বললেন, আমি বুঝতে পারলাম যে, তার কী মতবাদ, তিনি কী চান? মানুষকে তিনি জাগিয়ে তুলতে চান। তিনি ভাবতেন, মানুষ ঘুমিয়ে আছে। তাদের চেতনা জাগাতে হবে, তাদের উন্নত করতে হবে এবং তাদের সামগ্রিকভাবে যাতে একটা কাজ করার প্রবণতা আসে, তাদের মধ্যে যাতে কর্মক্ষমতা আসে, এই চেষ্টা আমাদের করতে হবে।
জিয়াউর রহমান এমন ব্যক্তি ছিলেন, যিনি মানুষকে কর্মচাঞ্চল্যে উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং সত্যিকার অর্থে আমাকে অনেক বার বলেছেন, আপনারা গ্রাম ঘুরুন, দেখবেন মানুষ জেগেছে। এতদিন তারা ঘুমিয়েছিল, তারা আজ জেগে উঠেছে। কথাটা তিনি ঠিকই বলেছেন আমার মনে হয়, মানুষ জেগে উঠেছিল।
গণতন্ত্রী পার্টির সংসদ সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত (সিলেট-২) সংসদে আনীত শোক প্রস্তাবে তার দল ও নিজের পক্ষ থেকে সর্বান্তকরণে সমর্থন করেন। তিনি বলেন, ৩০ মে থেকে ৩রা জুন যে লাখ লাখ জনতা শুধু ঢাকা নগরীতেই নয়, গোটা বাংলাদেশে তাদের অনুভূতি প্রকাশ করেছে, তার মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, আমাদের সাবেক রাষ্ট্রপতি (জিয়াউর রহমান) বাংলাদেশের মানুষের কত কাছাকাছি এবং প্রাণপ্রিয় ছিলেন। এটা বলতে যদি কেউ কুণ্ঠাবোধ করেন, এটা তার মানসিক দৈন্য এবং তার রাজনৈতিক বিচক্ষণতার অভাব বলে আমি মনে করি। এই যে লাখ লাখ জনতার স্রোত কেন এসেছিল, এই লাশটির পাশে, কেন এসেছিল জানাজায় ও গায়েবি জানাজায়? এসেছিল একটি মাত্র কারণে—সাবেক রাষ্ট্রপতির সততার প্রতি অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা জানাতে। ওই যে কোটি কোটি মানুষের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশে-বিদেশে আমরা যে গণতন্ত্রের কথা বলে এসেছিলাম এবং যে কথা বলে আমরা বিশ্ববিবেকের সমর্থন পেয়েছিলাম এবং তাকেই আমরা সংবিধানে গৃহীত করেছি।
যেখানে আমরা বলেছিলাম, মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির কথা এবং সেই কথাই এই সংবিধানে আমরা রেখেছি। তারই সেই বক্তব্য—সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতি মুক্তিযুদ্ধের যে প্রতিশ্রুতি ৩০ লাখ শহীদের রক্তে লেখা যে অঙ্গীকার—আজকে মরহুম জিয়াউর রহমান পালন করে যাননি যদি কেউ বলেন, তাহলে সত্যের অপলাপ হবে। আমি কীভাবে এ পার্লামেন্টে এলাম, কীভাবে আমি এখানে কথা বলছি? এটা সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশ এবং বাংলাদেশে সেই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া এভাবে চলছে।
তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতিকে কখন হত্যা করা হলো? ১৯৮০-তে নয়, ১৯৮১ সালের মে মাসে যখন রাষ্ট্রপতি দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন, যখন রাষ্ট্রপতি দৃঢ় প্রত্যয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংগ্রাম ঘোষণা করলেন, যখন শোষণহীন সমাজব্যবস্থার কথা বলতে চাইলেন, দক্ষিণ এশিয়া, পৃথিবীর বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে গেলেন, সিরিয়ায় গেলেন, নর্থ সাউথ ডায়ালগ ওপেন করতে গেলেন, আর সেই মুহূর্তে তার ওপর আঘাত এলো। সুতরাং আজকে নতুনভাবে আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে, এই আক্রমণ কিসের আক্রমণ। কারা এই আক্রমণ করেছে? তাদের উদ্দেশ্য কী? তাদের উদ্দেশ্য যাই হোক, দেশের কোনো মঙ্গল কামনা নয়, মানুষের মঙ্গল কামনা নয়, একটা ষষড়যন্ত্র মাধ্যমেই এই হত্যা। হত্যা করা হয়েছিল একটা স্টাবলিশমেন্টকে নষ্ট করার জন্য, স্থিতিশীলতাকে নষ্ট করার জন্য। স্থিতিশীলতা নষ্ট করে কারা লাভবান হয়—লাভবান হয় প্রতিক্রিয়াশীল চক্র, লাভবান হয় সাম্প্রদায়িক শক্তি, লাভবান হয় সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। আর ক্ষতিগ্রস্ত হয় বাংলার জনগণ, দুঃখী মানুষরা, দেশের আপামর জনগণ। যে গণতন্ত্রকে মূল্যায়নের জন্য মরুহম রাষ্ট্রপতির প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা, লাখ লাখ মানুষের আশা-ভরসা, তা আপনার (স্পিকারের) শোক প্রস্তাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক আন্দোলন দলীয় সংসদ সদস্য এ এস এম রাশেদ খান মেনন (বাকেরগঞ্জ-৯) বলেন, মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেবের ওপর আপনি যে শোক প্রস্তাব এনেছেন, তার প্রতি আমি আমার ব্যক্তিগত এবং দলের তরফ থেকে একাত্মতা ঘোষণা করছি। মরহুম জিয়াউর রহমানের মৃত্যু আকস্মিক এবং মর্মান্তিক। কিন্তু এই যে বর্তমান পরিস্থিতি, এটা বোধ হয় আমাদের কারও আশঙ্কার বাইরে ছিল না। গত কিছুদিন ধরেই দেশে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে, সে সম্পর্কে আমরা আশঙ্কা ব্যক্ত করেছি। এমনকি স্বয়ং রাষ্ট্রপতিও তার বক্তব্যে এই অস্বস্তিকর পরিস্থিতি সম্পর্কে তার মতামত ব্যক্ত করেছিলেন। কেবল মতামতই তিনি ব্যক্ত করেননি, এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য কার্যক্রম গ্রহণের কথাও তিনি ঘোষণা করেছিলেন। যখন গোটা দেশ এবং জাতি, বিরোধী দল তাদের রাজনৈতিক চিন্তাধারা অনুসারে এবং স্বয়ং রাষ্ট্রপতি তার চিন্তা অনুসারে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করার চিন্তা করেছিলেন, ঠিক সেই মুহূর্তে এই ঘটনা ঘটে গেল।
সবশেষে আমি একটি কথা বলতে চাই, আমাদের দেশের এসব হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন আমরা করতে পারিনি। আর করতে পারিনি বলে বারবার ষড়যন্ত্র ঘুরে-ফিরে আসছে। আজকেও বীর মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমানকে আমরা হারিয়েছি। দেশে গত কিছুদিনের ক্যু, কাউন্টার ক্যু—এসব ঘটনার মধ্য দিয়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এ দেশের মুক্তিযোদ্ধারা এবং এই মুক্তিযোদ্ধাদের ইলিমিনেট করার প্রসেস আমরা খুব গভীরভাবে লক্ষ করেছি।
আজকে আমরা জানতে চাই, এই ষড়যন্ত্র কোথায় কোন জায়গায় নিহিত রয়েছে, কোন সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্ত আজকে আমার দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিনষ্ট করার জন্য, মুক্তিযোদ্ধাদের ধ্বংস করার জন্য, মুক্তিযোদ্ধারা বীর উত্তম জিয়াউর এবং তার সাথী মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করার জন্য কোন ষড়যন্ত্র এর মধ্যে কাজ করছে?
মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার পরিচয়। তাকে সেভাবেই আমি দেখেছি, তাকে সেভাবেই আমি সম্মান করেছি। তার সঙ্গে তার যে কীর্তি, সেই কীর্তি অমর এবং অক্ষুণ্ন থাকুক—এটা কামনা করি।
সাম্যবাদী দলের সংসদ সদস্য মোহাম্মদ তোয়াহা (নোয়াখালী-১৩) বলেন, জনাব স্পিকার, আপনি যে শোক প্রস্তাব এখানে উত্থাপন করেছেন, আমি তার প্রতি সমর্থন জানিয়ে বলতে চাই যে, ্তুও ধস যবত্ব ঃড় ঢ়ত্ধরংব ঈধবংধত্ ধহফ হড়ঃ ঃড় ঢ়বত্রংয.্থ আজকে আমাদের মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান সাহেবের প্রশংসার কথাই আমাকে বলতে হবে। সফলতা এবং ব্যর্থতা নিয়েই মানুষের জীবন। মানুষকে বিচার করতে হবে—তার সফলতার দিক প্রধান, না ব্যর্থতার দিক প্রধান সেদিক থেকে। আমি নিঃসন্দেহে বলতে চাই, মরহুম জিয়াউর রহমান তার সফলতা নিয়েই আমাদের মধ্য থেকে বিদায় নিয়েছেন।তার সঙ্গে আমাদের অনেকেরই ব্যক্তিগত সম্পর্ক ছিল। কার সঙ্গে সম্পর্কের গভীরতা কতটুকু, সেটা বলতে পারব না। কিন্তু আমাদের সঙ্গে যে সম্পর্ক ছিল সেটাই আমি বলতে পারি। আমার সঙ্গে তার প্রথম সংযোগ হয় ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সময়ে। সাক্ষাত্ পরিচয়ের সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও তিনি আমাকে জানতেন এবং সেই কারণেই আমাদের সংযোগ হয়েছিল। আজকে অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে আমাকে বলতে হচ্ছে, জেনারেল জিয়া একজন নেতা হিসেবে জন্মগ্রহণ করেননি।
জাতির জীবনের এক সঙ্কটপূর্ণ মুহূর্তে তার ওপর এই গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয়েছিল। তিনি নেতা হয়ে জন্মাননি। একটা বিশেষ ঘটনা পরম্পরায় তার ওপর দায়িত্ব এসেছিল এবং তার পরবর্তী বছরগুলোতে তিনি সে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ঐব যধং ধপয়ঁরত্বফ ধষষ ঃযব ধত্ঃ ড়ভ ষবধফবত্ংযরঢ়.তাই আজকে বলব, বিশ্বপরিসরে যাদের আমরা সাধারণত এত্বধঃ খবধফবত্ বলি, এবহবত্ধষ জিয়া সাহেবকে সেইরূপে এত্বধঃ খবধফবত্-এর পর্যায়ভুক্ত আমি বলতে চাই। তবে তিনি একটা যে মহত্ প্রচেষ্টায় ব্রতী হয়েছিলেন, সেটা সম্পন্ন করে যেতে পারেননি। অর্থাত্ আজকে বাংলাদেশের এই জাতীয় সঙ্কটময় মুহূর্তে জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব সংরক্ষণের জন্য দেশ প্রেমিকদের অন্তত সংগঠিত করা, ঐক্যবদ্ধ করার সেই প্রচেষ্টা তিনি শুরু করেছিলেন। অনেক খানি তিনি অগ্রসরও হয়েছিলেন। কিন্তু সম্পূর্ণ করে যেতে পারেননি।
জেনারেল জিয়া আমাদের দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, গোটা বিশ্বে তিনি বাংলাদেশকে তুলে ধরতে পেরেছেন সফলতার সঙ্গে। তিনি মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের একাত্মতা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তৃতীয় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের জাতীয় স্বার্থের সপক্ষে তিনি দাঁড়িয়েছিলেন। ভিয়েতনামের ঘটনায় তিনি আমাদের জাতির পক্ষ থেকে ভিয়েতনামের জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার পক্ষে তার বক্তব্য তুলে ধরেছেন। কাজেই আন্তর্জাতিক পরিসরে জেনারেল জিয়া যে ভূমিকা পালন করেছেন, তার দ্বারা তিনি আমাদের দেশ ও জাতির মুখ উজ্জ্বল করতে সক্ষম হয়েছেন।
যা হোক আমার বক্তৃতা দীর্ঘায়িত করার প্রয়োজন নেই। এখানে কয়েকটা কথা উঠছে। জেনারেল জিয়া তার নিজের পরিবারের জন্য কিছু রেখে যেতে পারেননি। তার সন্তান-সন্ততির ভবিষ্যতের জন্য তিনি কিছু রেখে যাননি। কিন্তু আমাদের ওপর তিনি সেই গুরুদায়িত্ব রেখে গেছেন। আমি বিশ্বাস করি, যদি আমরা এই জাতীয় সংসদ একমত হই, তাহলে আমরা সেই দায়িত্ব পালন করতে পারি।
ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) প্রফেসর মোজাফফর আহমদ (কুমিল্লা-১১) বলেন, মিস্টার স্পিকার স্যার, আমার পার্টির পক্ষ থেকে আপনার এই শোক প্রস্তাবে সমর্থন করার জন্য দাঁড়িয়েছি। যেসব বিশেষণে জিয়াউর রহমান সাহেবের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, তার সঙ্গে আমি একমত। তবে আমি শুধু এটুকুই যোগ করতে চাই, তিনি একজন সাধারণ মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না, তিনি একজন সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। তিনি নিজ জীবনকে বাজি রেখে যুদ্ধ করেছেন এবং রেডিও মারফত স্বাধীনতার বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। আমি যখন ঢাকা শহরেই আত্মগোপন অবস্থায় অসহায় ছিলাম, তখন রেডিও মারফতই তার সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। পরবর্তী পরিচয়ের কথা বলে আমি দীর্ঘায়িত করতে চাই না।
তিনি একজন ফবঃবত্সরহবফ লোক ছিলেন, তিনি একজন সত্ লোক ছিলেন এবং জনতার মধ্যে তার জন্য যেটা আপনারা লক্ষ করেছেন, সেটায় আমি দ্বিমত পোষণ করছি না। তিনি জনতাকে কিছু দিয়ে যেতে পেরেছিলেন, সেটার কারণেই নয়; জনতা বুঝতে পেরেছিল, তিনি কিছু দিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, তারা বুঝতে পেরেছিল, তিনি একজন সত্ ও দেশপ্রেমিক লোক। আজকে আমাদের দেশই নয় শুধু, উন্নত দেশগুলোতেও সত্ লোক পাওয়া বিরল। তাই কবির ভাষায় বলতে হয়, ‘এনেছিলে সাথে করে মৃত্যুহীন প্রাণ মরণে তাই তুমি করে গেলে দান।’আমাদের বন্ধুরা যে বলেছেন, তিনি একজন জাতীয়তাবাদী ছিলেন, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সন্দেহ থাকতে পারে, জাতীয়তাবাদীরা খবভঃরংঃ ও ত্রমযঃরংঃ-ও হয়, পবহঃত্রংঃ-ও হয়, তবে তিনি জাতীয়তাবাদী ছিলেন, তাতে সন্দেহের অবকাশ নাই। তিনি ভীতু ছিলেন না, ভীতু বাঙালি বলে যে আমরা পরিচিত—তিনি প্রমাণ করে গেছেন, বাঙালি ভীতু নয়।
খেমকারন সেক্টরের কথা অনেকে বলেছেন, আমিও তার সঙ্গে একমত। আমি বন্ধুদের বলতে চাই, সবাই বলেছেন, চোখের পানি আর ফেলতে চাই না। সবাই দেখছি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, যাতে চোখের পানি আর ভবিষ্যতে না আসে। তাদের সঙ্গে এতমত হয়ে আমি শুধু যোগ করতে চাই, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে কেন এভাবে চোখের পানি ফেলতে হয়।
জাসদ নেতা শাজাহান সিরাজ বলেছিলেন, রাষ্ট্রপতি হিসেবে মরহুম জিয়াউর রহমান সাহেবের অনেক সমালোচনা আমরা করেছি। একটি রাজনৈতিক দল বা রাজনৈতিক ব্যক্তিকে রাজনীতি দিয়ে মোকাবিলা করাই রাজনৈতিক নিয়ম। সে হিসেবেই রাষ্ট্রপতি মরহুম জিয়াউর রহমানের সফলতা দেশবাসীর কাছে অক্ষুণ্ন থাকবে।
মিজানুর রহমান চৌধুরী : মরহুম জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আমার প্রথম পরিচয় হয়েছিল পাকিস্তানে, যখন ১৯৫৮ সালে মার্শাল ল’ দেয়া হয়। তারপরে তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল খেমকারান রণাঙ্গনে। আমরা পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের তরফ থেকে সেখানে গিয়েছিলাম। তারপর তার সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। বড় দুঃখের দিনের পরিচয়। চোখের জলের বিনিময়ে সেই পরিচয় আমাদের হয়েছিল।আজকে তিনি জীবিত নেই। মৃত্যু এই জীবনেরই পরিণতি। ধর্মীয় দিক থেকে বলুন, দার্শনিক দিক থেকে বলুন, কবির দিক থেকে বলুন, এসব মুখোমুখি এসব দেখাশোনা ক্ষণিকের মেলা’। মানুষ আসে যাবার জন্যই। তিনি গিয়েছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো এই যে, এই মৃত্যু তো স্বাভাবিকভাবে হতে পারত। এ মৃত্যু তো স্বাভাবিকভাবে হয় নাই। আজকে টেলিভিশনে আমি দেখলাম জিয়াউর রহমান সাহেবের ছেলের আর্তনাদ তার আব্বুর জন্য। জিয়াউর রহমানের স্ত্রী কফিনের ওপর লুটিয়ে পড়েছেন। সন্তানরা আব্বু আব্বু বলে চিত্কার করেছে। আমিও সন্তানের পিতা। এই সংসদের অনেকেই সন্তানের পিতা। আমি বলতে চাই, আর যেন রেখে যাওয়া কারও চোখের পানি আমাদের দেখতে না হয়, তিনি যে দলের হোন না কেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধা হোন আর অমুক্তিযোদ্ধা হোন, কারও রেখে যাওয়া সন্তানের চোখের পানি যেন আমাদের দেখতে না হয়।
সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান বলেন, জিয়াউর রহমান আদর্শ হিসেবে শুধু বাংলাদেশে নয়, দুনিয়ার নিপীড়িত জনগণের জন্য একটি প্রেরণার উত্স হয়ে তিনি বেঁচে থাকবেন কেয়ামত পর্যন্ত। তিনি ইতিহাসের পৃষ্ঠায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে। তিনিই প্রথম চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। আমার জানামতে, জিয়াউর রহমান প্রথম সামরিক জেনারেল, যিনি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পর জনগণকে ক্ষমতা ফেরত দেন।
মুসলিম লীগ পার্লামেন্টারি পার্টির নেতা খান এ সবুর বলেন, জিয়াউর রহমান সাহেব সাদাসিধা জীবনযাপন করতেন। তার অপ্রাপ্ত বয়স্ক সন্তানদের জন্য এবং বিধবা পত্নীর জন্য তিনি একখানি বাড়ি রেখে যেতে পারেননি। তার ব্যাংক ব্যালান্সও নেই। এই ছেলেপিলেদের সাবালক হওয়া পর্যন্ত শিক্ষার কোনো ব্যবস্থাই তিনি করে যেতে পারেননি। কেননা, কোনোদিন টাকা পয়সার লোভ লালসা তার ছিল—একথা তার শত্রুরাও বলতে পারবে না। সেই জন্যই আমি এই সংসদের কাছে অনুরোধ জানাব, যে পর্যন্ত তার সন্তান সন্ততিরা সাবালক না হয়, তাদের জন্য একটি সম্মানজনক ভাতা ও তাদের পারিবারিক বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হোক, যাতে তারা কোনো প্রকার কষ্ট না পায়।
ড. মো. ওসমান গনি (ময়মনসিংহ-২১) বলেন, মরহুম জিয়াউর রহমান তার এই স্বল্প পরিসর নেতৃত্বকালে জাতিকে স্বাবলম্বন ও স্বনির্ভরতার আদর্শ ও বহুমুখী উত্পাদনের রাজনীতিতে উদ্বুদ্ধ করে গেছেন এবং জাতীয় জীবনে তা সম্যক প্রতিফলিত করার জন্য ব্যক্তিগতভাবে যে অক্লান্ত পরিশ্রম, অসম সাহসিকতা ও মনোবলের দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন তা সমসাময়িক ইতিহাসে এক নজিরবিহীন অধ্যায় হয়ে থাকবে। এই আদর্শ ও দৃষ্টান্ত শুধু বাংলাদেশের জন্যই ভবিষ্যতের কর্মপ্রেরণা ও সৃজনী শক্তির উত্স হয়ে থাকবে না, আমি মনে করি পৃথিবীর অন্যান্য অনুন্নত, অনগ্রসর দেশগুলোও তার আদর্শে সঞ্জীবিত হবে।
একেএম রফিক উল্লাহ (চট্টগ্রাম-১২) বলেন, জিয়াউর রহমান ব্যক্তি হিসেবে রাজনীতিতে নিজের পরিচয় রেখে গেছেন অত্যন্ত সত্, চরিত্রবান হিসেবে। তিনি সব সময় জাতির মঙ্গল কামনা করতেন। এতে কোনো দ্বিধা নেই।
উল্লেখ্য, জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালের ৩ জুন নির্বাচনে বিপুল ভোটে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। আর তিন বছর পর ১৯৮১ সালের ৩ জুন সংসদে শোক প্রস্তাব উত্থাপিত হয়। ওই বছরের ২ জুন প্রেসিডেন্ট জিয়া নতুন সংসদ ভবন পরিদর্শন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। আর ওই ২ জুনই তার লাশ এই নতুন সংসদ ভবনের সামনে আনা হয়। তার জানাযায় সেদিন লাখ লাখ মানুষ শরীক হয়। সংসদ ভবন সংলগ্ন ক্রিসেন্ট লেকের পাশেই তাকে দাফন করা হয়।