জিয়া লাইব্রেরি ডেস্ক : ৩০ মে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৩৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৮১ সালের এই দিনে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্যের হাতে তিনি নিহত হন। জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর কমান্ডার ও জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) প্রতিষ্ঠাতাও তিনি। বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলো প্রতিবছর দিনটি জিয়াউর রহমানের শাহাদাতবার্ষিকী হিসেবে পালন করে।
দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ। একজন ঈমানদার মানুষের মধ্যে দেশপ্রেম থাকা অপরিহার্য। দেশপ্রেম ও সততা শব্দ দুটি একে অন্যের পরিপূরক। যে দেশপ্রেমিক সে অবশ্যই সত্। আবার যে ব্যক্তি সত্ তার মধ্যে অবশ্যই দেশপ্রেম আছে। একজন প্রকৃত নেতার মধ্যে অনেক গুণাবলী থাকা আবশ্যক। তার মধ্যে দেশপ্রেম ও সততা অন্যতম। সততা ও দেশপ্রেমের কারণেই শহীদ জিয়া আমাদের প্রিয় নেতা ও জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব। আমাদের বিশ্বাস, জিয়াউর রহমানের যে কট্টর সমালোচক, সেও জিয়াউর রহমানের সততা ও দেশপ্রেম নিয়ে কটূক্তি করতে পারবে না। সততা ও দেশপ্রেমের প্রশ্নে আপসহীন এই মহান নেতা দেশের কোটি কোটি মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় অবস্থান করে নিয়েছেন।
জিয়াউর রহমানের স্কুলজীবন শুরু হয় কলকাতায় ‘হেয়ার স্কুলে’। ১৯৫২ সালে তিনি দ্বিতীয় বিভাগে ম্যাট্রিক পাস করেন করাচিতে ‘করাচি একাডেমি স্কুল’ (বর্তমানে, তাইয়েব আলী আলভী একাডেমী) থেকে। ম্যাট্রিক পাসের পর তিনি ভর্তি হন করাচির ‘ডি জে কলেজে’। ১৯৫৩ সালে ‘পাকিস্তান সামরিক একাডেমি’তে একজন অফিসার ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন।
১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে একজন কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে বীরত্ব দেখিয়ে জিয়াউর রহমান পাক সেনাবাহিনীতে প্রভাবশালী কর্মকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হন। এ সময়েই জিয়াউর রহমান বাঙালি সহকর্মীদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি নিয়ে আলোচনা করেন। এরপর তাকে পাকিস্তান সামরিক একাডেমীতে প্রশিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। সেখানেও তিনি নবীন সেনা অফিসারদের সঙ্গে ‘স্বাধীন বাংলাদেশ’ বিষয়ে কথা বলেছেন।
এদিকে, ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর পূর্ব-পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনে ব্যাপক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ক্ষমতা প্রাপ্তির সুযোগ পায় পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগ। জাতীয় পরিষদের ১৬২ আসনের মধ্যে ১৬০টি ও প্রাদেশিক পরিষদের ৩০০টি আসনের মধ্যে ২৮৮টি আসনে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে।
এই বিশাল বিজয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তান রাষ্ট্রের ক্ষমতা গ্রহণের অপেক্ষায় ছিলেন। অন্যদিকে, পাকিস্তান পিপলস্ পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো এ নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত কম আসনে জয় পেয়েও ক্ষমতা ভাগাভাগির নানা কৌশল আটতে থাকেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানও এ অপকৌশলে সহায়ক ভূমিকা রাখেন। দীর্ঘ বিলম্বের পর ১৯৭১ সালের ৩ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহ্বান করেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। কিন্তু, কোনো কারণ ছাড়াই হঠাত্ ১ মার্চ দুপুরে জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন তিনি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ফুঁসে ওঠে পূর্ব-পাকিস্তানের জনগণ। ১ মার্চ থেকেই রাজপথে নেমে আসেন তারা। ২ মার্চ উত্তাল হয়ে ওঠে ঢাকা। শাসকগোষ্ঠীর কারফিউ ভেঙে দিন-রাত চলে বিক্ষোভ। বিক্ষোভে নির্বিচারে গুলিতে নিহত হয় অন্তত তিনজন। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান এদিন এক বিবৃতিতে ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত গোটা প্রদেশে হরতালের ডাক দেন।
২ মার্চ থেকে ৫ মার্চ দেশজুড়ে সংঘর্ষ চলে। বহু মানুষ হতাহত হন। ৬ মার্চ দুপুর ১টা ৫ মিনিটে রেডিও পাকিস্তানের জাতীয় অনুষ্ঠানে ইয়াহিয়া খান জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন এবং ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের উদ্বোধনী অধিবেশন আহ্বান করেন।
পরের দিন ঐতিহাসিক ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে শেখ মুজিবুর রহমান কী ভাষণ দেবেন তা শোনার জন্য সারাদেশ ও আন্তর্জাতিক মহল অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল। ৭ মার্চ শেখ মুজিব বজ্রকণ্ঠে সাত দফা ঘোষণা করেন। সামরিক আইন ও সেনা বাহিনী প্রত্যাহার, গণহত্যার তদন্ত এবং জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জনগণের প্রতিনিধিদের নিকট ক্ষমতা হস্তান্তর করা হইলে পরিষদের অধিবেশনে যোগদানের প্রশ্ন বিবেচনা করা যাইতে পারে, তাহার পূর্বে নয়।’ সাবেক প্রধান বিচারপতি হাবিবুর রহমানের লেখা ‘বাংলাদেশের তারিখ’ (প্রথম সংস্করণ) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়েছে—“বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ‘জয়-বাংলা, জয় পাকিস্তান’ বলে ৭ মার্চের ভাষণ শেষ করেন।”
৯ মার্চ মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী পল্টনের এক জনসভায় শেখ মুজিবকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী অপেক্ষা বাংলার নায়ক হওয়া অনেক গৌরবের।’ (দৈনিক আজাদ, ১০ মার্চ ১৯৭১) ১০ মার্চ একইভাবে তিনি বলেন, ‘আলোচনায় কিছু হবে না। ওদের আসসালামু আলাইকুম জানিয়ে দাও।’
১৩ মার্চ ভৈরবে এক জনসভায় ভাসানী বলেন, ‘পূর্ববাংলা এখন সম্পূর্ণ স্বাধীন এবং আমরা এখন একটি পূর্ববাংলা সরকারের অপেক্ষায় আছি।’ ১৪ মার্চ জনতার বাঁধভাঙা আন্দোলনের একপর্যায়ে শেখ মুজিবুর রহমান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রধান ওয়ালী খানের সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকের আগ্রহ প্রকাশ করেন।
শাসনতান্ত্রিক সংকট প্রশ্নে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে আলোচনার জন্য ১৫ মার্চ প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবু মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। ১৬ মার্চ প্রথম শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান বৈঠকে বসেন।
১৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের দ্বিতীয় দফা সংলাপও সিদ্ধান্ত ছাড়াই শেষ হয়। ১৮ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠকের বিরতি ছিল। ১৯ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানের মধ্যে তৃতীয় দফা বৈঠক হয়। বৈঠকের পর শেখ মুজিব সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মঙ্গলের প্রত্যাশী, আবার চরম পরিণতির জন্যও প্রস্তুত।’ ২০ মার্চ বৈঠকের পর আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে বলে জানান তিনি।
২১ মার্চ পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় আসেন। প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পৃথকভাবে শেখ মুজিবুর রহমান ও ভুট্টোর সঙ্গে বৈঠক করেন। রাজনৈতিক সঙ্কট উত্তরণে ২২ মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া-ভুট্টো শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এরপর পূর্ব ঘোষিত ২৫ মার্চের জাতীয় পরিষদের সভা স্থগিত করা হয়।
দীর্ঘ আলোচনার পর ২৪ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান সমঝোতার আভাস দেন। সংবাদ সম্মেলনে শেখ মুজিব বলেন, ‘ক্ষমতা হস্তান্তরের ব্যাপারে আমরা মতৈক্যে পৌঁছেছি। আমি আশা করি, প্রেসিডেন্ট এখন তা ঘোষণা করবেন।’
২৫ মার্চ দিনব্যাপী ঢাকা শহরে চলে প্রতিবাদ মিছিল, রাস্তায় রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি এবং বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষ চলে সংগ্রামী মানুষের সঙ্গে সেনাবাহিনীর জওয়ানদের। সন্ধ্যা ৬টার মধ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান গোপনে ঢাকা ত্যাগ করেন। এ দিন রাত ১১টার পর থেকে অপারেশন সার্চ লাইট শুরু করে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। পাকবাহিনী রাজারবাগ পুলিশ লাইন, পিলখানা, ইপিআর সদর দফতর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পুরো ঢাকা মহানগরীতে হত্যাযজ্ঞ চালায় এবং অগ্নিসংযোগ করে।
রাত ১টা ১০ মিনিটের দিকে একটি ট্যাংক, একটি সাঁজোয়া গাড়ি এবং কয়েকটি ট্রাক বোঝাই সৈন্য শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ির ওপর দিয়ে গুলি ছুড়তে ছুড়তে রাস্তা ধরে এগিয়ে আসে এবং তাকে সহ ৪ জন চাকর এবং একজন দেহরক্ষীকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের আগেই শেখ মুজিবুর রহমান গণহত্যার প্রতিবাদ এবং নির্বাচিত প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবিতে ২৭ মার্চ সারাদেশে হরতাল আহ্বান করেন। পরের দিন শেখ মুজিবের গ্রেফতার ও হরতালের খবর প্রায় সব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
এদিকে রাত আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম থেকে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন মেজর জিয়াউর রহমান। এর আগে দিনে চট্টগ্রাম শহরে টানটান উত্তেজনা বিরাজ করে। অস্ত্র বোঝাই জাহাজ সোয়াতের বিরুদ্ধে গড়ে তোলা হয় প্রবল প্রতিরোধ। অস্ত্র খালাস করে যাতে পশ্চিমা সৈন্যদের হাতে না পৌঁছতে পারে সে জন্য রাস্তায় রাস্তায় তৈরি করা হয় ব্যারিকেড। এই ব্যারিকেড সরিয়ে রাস্তা পরিষ্কারের কাজে লাগানো হয় বাঙালি সৈন্যদের। রাত ১০টা পর্যন্ত চলে এই ব্যারিকেড সরানোর কাজ। রাত ১১টায় চট্টগ্রামস্থ অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট’র কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল আবদুর রশীদ জানজুয়া আকস্মিকভাবে সেকেন্ড ইন কমান্ড মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে নির্দেশ পাঠান এক কোম্পানি সৈন্য নিয়ে বন্দরে যাওয়ার জন্য।
রাত প্রায় সাড়ে ১১টায় জানজুয়া নিজে এসে মেজর জিয়াকে নৌ-বাহিনীর একটি ট্রাকে তুলে ষোলশহর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বন্দরের দিকে রওনা করিয়ে দেন। সঙ্গে একজন নৌ বাহিনীর অফিসারকে (পশ্চিম পাকিস্তানি) গার্ড হিসেবে দেয়া হয়। রাস্তায় বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড সরিয়ে যেতে তাঁর দেরি হয়। আগ্রাবাদে একটা বড় ব্যারিকেডের সামনে বাধা পেয়ে তাঁর ট্রাক থেমে যায়, তখনই পেছন থেকে একটি ডজ গাড়িতে ছুটে আসেন ক্যাপ্টেন খালেকুজ্জামান। গাড়ি থেকে নেমেই তিনি দৌড়ে যান মেজর জিয়াউর রহমানের কাছে। হাত ধরে তাকে রাস্তার ধারে নিয়ে যান। জানান, ক্যাপ্টেন অলি আহমদের কাছ থেকে বার্তা নিয়ে এসেছেন। পশ্চিমারা গোলাগুলি শুরু করেছে। শহরে বহু লোক হতাহত হয়েছে। এতে চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন মেজর জিয়াউর রহমান। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে দৃঢ়কণ্ঠে তিনি বলে ওঠেন— ‘উই রিভোল্ট।’ সঙ্গে সঙ্গে তিনি খালেকুজ্জামানকে ষোলশহরে ফিরে গিয়ে ব্যাটালিয়নকে তৈরি করার জন্য কর্নেল অলি আহমদকে নির্দেশ দিতে বলেন। আর সেই সঙ্গে নির্দেশ পাঠান ব্যাটেলিয়নের সমস্ত পশ্চিমা অফিসারকে গ্রেফতারের। এই রেজিমেন্টের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল জানজুয়াসহ সব পশ্চিমা অফিসারকে গ্রেফতার করা হলো।
এরপর অন্যান্য ব্যাটেলিয়নের বাঙালি সেনা কর্মকর্তাদের ফোন করলেন, কিন্তু অনেককেই পেলেন না। এ পর্যায়ে তিনি বেসামরিক বিভাগে টেলিফোন অপারেটরকে ফোন করে ডিসি, এসপি, কমিশনার, ডিআইজি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের জানাতে অনুরোধ করেন যে, ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের অষ্টম ব্যাটালিয়ন বিদ্রোহ করেছে। টেলিফোন অপারেটর মেজর জিয়ার এ অনুরোধ সানন্দে গ্রহণ করেন।
এ পরিস্থিতিতে মেজর জিয়া অষ্টম ব্যাটেলিয়নের অফিসার, জেসিও জোয়ানদের জড়ো করলেন। ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে তখন রাত আনুমানিক ২টা ১৫ মিনিট। তিনি ঐতিহাসিক স্বাধীনতার ঘোষণা দিলেন। ঘোষণায় বললেন, “আমি মেজর জিয়াউর রহমান প্রভিশনাল প্রেসিডেন্ট ও লিবারেশন আর্মি চিফ হিসেবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি এবং যুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য দেশবাসীকে আহ্বান জানাচ্ছি। বাংলাদেশ স্বাধীন। আমরা স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হলাম। আপনারা যে যা পারেন, সামর্থ্য অনুযায়ী অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। আমাদেরকে লড়াই করতে হবে এবং পাকিস্তানি বাহিনীকে দেশ ছাড়া করতে হবে।”
মেজর জিয়া ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্রে যান। বেতার কর্মীরা মেজর জিয়াউর রহমানকে পেয়ে উত্ফুল্ল হয়ে ওঠেন। কিন্তু কি বলবেন তিনি? একটি করে বিবৃতি লেখেন আবার তা ছিঁড়ে ফেলেন। এদিকে বেতার কর্মীরা বারবার ঘোষণা করছিলেন যে, আর পনের মিনিটের মধ্যে মেজর জিয়াউর রহমান ভাষণ দেবেন। প্রায় দেড় ঘণ্টায় তিনি তৈরি করেন তাঁর ঐতিহাসিক ঘোষণাটি। সেটা তিনি বাংলা এবং ইংরেজিতে পাঠ করেন। এই ঘোষণা ১৯৭১ সালের ২৭ মার্চ দিল্লির ‘দি স্টেটস্ম্যান’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।
আমাদের দেশে বহুল প্রচারিত একটি বিতর্ক আছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা কে করেছেন ? দেশে বড় দুটি দল , একটি বিএনপি অপরটি মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বাধীন দল আওয়ামী লীগ । তাদের প্রত্যেকের দাবি তাদের নেতার পক্ষে । এমন একটি বিষয় যা স্বাধীনতার বিশেষ একটি মান মর্যাদার সাথে জড়িত, এমন একটি বিষয় নিয়ে বিতর্ক করা কখনই উচিত নয় । কিন্তু আমাদের দেশে অনুচিত অনেক কিছু ঘটে যা বিশ্বে আর কোন দেশে ঘটে না । যেমন, স্বাধীনতার মহান নেতাকে গালি দেয়া , দেশ নিয়ে বিতর্ক করা , ইত্যাদি .।এর সাথে স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে এই বিতর্ক কোন নূতন ঘটনা নয় । তবে আমাদের এই বিতর্কের ফলে জাতি দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে । এই পিছিয়ে পড়া জাতি কি করে মাথা তুলে দাঁড়াবে যদি কোন একতা না থাকে ?
জিয়াউর রহমান ২৬ মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন এনিয়ে কোনো বিতর্কের কোন সুযোগ নেই।জিয়াউর রহমান সেদিন সাত কোটি বাঙালির স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। বাংলাদেশের স্বাধীণতার ঘোষনা তৎক্ষালীন রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দেওয়ার কথা থাকলেও তা দিতে তারা ব্যর্থ হয়েছিলেন। এ জন্য ২৬ মার্চ জিয়াউর রহমান এই ঘোষনা দিয়ে জাতিকে মুক্তি সংগ্রামের দিকে দাবিত করেছিলেন। এই ঘোষনা কারো প্রেরিত বার্তা ছিলোনা বরং জিয়াউর রহমানের নিজের লিখা বার্তা ছিলো।
জিয়াউর রহমান রণাঙ্গনে সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন এবং জেড ফোর্সের প্রধান হিসেবে পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেন। ১৯৭১-এর ২৬ মার্চ থেকে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় মহান বিজয়। বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই করে নেয় বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্র। বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান ব্যারাকে ফিরে যান এবং সেনাবাহিনীর নিয়মিত চাকরিতে যোগ দেন। তাঁর ডাকে দেশের সর্বস্তরের মানুষ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশ স্বাধীন করেন।পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী যদি যুদ্ধে জয়লাভ করত তাহলে জিয়াউর রহমানকে ফাঁসিতে ঝুলতে হতো।
১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতারের পরমুহুর্তে মেজর জিয়ার দুঃসাহসিক আত্মপ্রকাশ। মেজর জিয়াই মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমানের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্ন করে নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করে শেখ মুজিবকে ইতিহাসের মহানায়ক হওয়ার ক্ষেত্র টেকসই করে সম্প্রসারিত করেছেন। আজকাল স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে বিতর্ক নিরর্থক এবং নিতান্তই কূট রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের হাতিয়ার মাত্র। মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা আছে বিশ্বজুড়ে।
ততকালীন মেজর জিয়া পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ ত্যাগ করে একাত্তরের ২৬ মার্চ চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ নিজ কানে শুনেছেন জিয়ার কন্ঠে ঘোষিত স্বাধীনতার বাণী। শুধু বাংলাদেশের অভ্যন্তরে নয় বর্হিবিশ্বের গোয়েন্দা নেটওয়ার্কেও জিয়াউর রহমানের দেয়া স্বাধীনতার ঘোষণা ধরা পড়ে। আর সেভাবেই সন্নিবেশিত হয় তাদের নথিতে। অবমুক্তকৃত সিআই এর গোপন দলিলে সেই সত্যটিই প্রকাশ পেয়েছে মাত্র। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কার্টার, ভারতের প্রেসিডেন্ট মোরারজী দেশাইও জিয়াউর রহমানকে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক বলে উল্লেখ করেছেন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক ফোরামে এবং বিভিন্ন সময় উচ্চারিত হয়েছে এ প্রসঙ্গটি। জিয়াউর রহমান একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা লগ্নে চট্টগ্রামের কালুর ঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ নিজ দায়িত্বে এবং ২৭ মার্চ শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার কথা ১৯৮২ সালে নভেম্বর মাসে প্রথম প্রকাশিত স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের ১৫ খন্ডে উল্লেখ রয়েছে।
জিয়ার কণ্ঠে স্বাধীনতার অমোঘ ঘোষণা সিআইএর মত লন্ডনের সাপ্তাহিক গার্ডিয়ান সহ গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ও সংবাদ মাধ্যম লিপিবদ্ধ করে রেখেছে।জিয়ার তেজোদীপ্ত কন্ঠের ঘোষণা শুনেছেন এমন লক্ষ লক্ষ মানুষ এখনো বাংলাদেশের মুক্ত বাতাসে নি:শ্বাস ফেলছেন। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেনানায়ক ও আওয়ামী লীগ নেতা জেনারেল কেএম শফিউল্লাহ, মেজর রফিকুল ইসলাম বীর উত্তম, সৈয়দ আলী আহসান, ব্যারিষ্টার আমিরুল ইসলাম, আনিসুজ্জামান, রাও ফরমান আলী, মেজর জেনারেল সুখবন্ত সিং, মেজর জেনারেল লছমন সিং, লে. জেনারেল মতিন, জেনারেল সুবিদ আলী ভূঁইয়াসহ অনেকেই তাদের নিজগৃহে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে জিয়ার কন্ঠে স্বাধীনতা ঘোষণা প্রসঙ্গে উল্লেখ করেছেন। জিয়া একাত্তরের ২৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭:৪৫ মিনিটে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রথম স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। চট্টগ্রাম বন্দরে নোঙ্গররত অবস্থায় একটি জাপানী জাহাজ থেকে অষ্ট্রেলিয়া রেডিওতে জিয়ার ঘোষণার বার্তাটি পাঠানো হয়। অস্ট্রেলিয়া রেডিও জিয়ার ঘোষণাটি প্রথম প্রচার করে। এরপর বিবিসি’তে প্রচারিত হওয়ার পর তা পর্যায়ক্রমে ছড়িয়ে পড়ে সারা বিশ্বে।
জিয়ার স্বাধীনতা ঘোষণার প্রমাণ মিলে ভারতের ততকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর বক্তব্যেও। ১৯৭১ সালের ৬ নভেম্বর নিউইয়র্কের কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে সেমিনারে বক্তৃতায় এক জায়গায় ইন্দিরা গান্ধী বলেন, শেখ মুজিব এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেননি। তিনি চাচ্ছেন সমস্যার একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান, যার সুযোগ এখনো আছে। ‘ইন্ডিয়া সিকস’ (ওহফরধ ঝববশং) নামক বইতে ইন্দিরা গান্ধীর এ বক্তব্যটি সংকলিত হয়েছে।১৯৭৮ সালে ভারত সফরকালে দিল্লিতে জিয়াউর রহমানের সম্মানে আয়োজিত ভোজ সভায় ভারতের ততকালীন প্রেসিডেন্ট নীলম সঞ্জীব রেড্ডি জিয়াকে বলেন, সর্বপ্রথম স্বাধীনতা ঘোষণা করে আপনি বাংলাদেশের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবেন। প্রয়াত ঔপন্যাসিক হুমায়ুন আহমেদ তার “জোসনা ও জননীর গল্প” উপন্যাসের (১৮২-১৮৩) পাতায় জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে লিখেছেন।এরকম অনেক উদাহরণ ও প্রমাণ রয়েছে দেশে বিদেশে বইপুস্তকে-দলিল দস্তাবেজে, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিদের উক্তিতে। একাত্তরে ২৬ মার্চ শেখ মুজিব গ্রেফতার হন পাকবাহিনীর হাতে। এমতাবস্থায় তার পক্ষে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়ার মতো সুযোগ ও সময় কোনটাই ছিলো না।
সেদিন শেখ মুজিবের কন্ঠের স্বাধীনতা ঘোষণার কথা কেউ শুনেননি। তাতে কিবা আসে যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্রাপ্তিতে শেখ মুজিবের ভূমিকা ও অবদান অবিস্মরণীয়। স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে না পারার কারণে তার মর্যাদা বিন্দুমাত্র ম্লান হওয়ার কোন অবকাশ নেই।
অথচ এমন একটি স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত সত্যকে মিথ্যে প্রমাণিত করার যারপরনাই চেষ্টা চলছে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে । দেশের আপামর জনসাধারণের আস্থা ও বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করে কোর্ট-কাচারী, মামলা-মোকদ্দমা এমনকি রাষ্ট্রীয় সংবিধান পাল্টিয়ে জিয়াউর রহমানকে তার প্রাপ্য মূল্যায়ন ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত করার অপচেষ্টায় রত বর্তমান সরকার। বিকৃত করা হচ্ছে ইতিহাস। প্রতিহিংসার করাত চালিয়ে জাতিকে চিড়ে ফেলার চেষ্টা কখনো শুভ হতে পারে না। ইতিহাসে যার যেখানে স্থান সেখানে অবশ্যই তাকে সমাসীন করতে হবে। কাউকে অবমূল্যায়ন, অবমাননা করে কিংবা একজনের জায়গায় অন্যকে প্রতিস্থাপিত করে জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। অসুস্থ রাজনীতির বহমান এ ধারা দেশ ও জাতিকে কোথায় নিয়ে ঠেকাবে সে আশংকাই আজ বড় হয়ে দেখা দিয়েছে।
এ বিভেদ বিভ্রান্তি ও প্রতিহিংসার রাজনীতি থেকে বেড়িয়ে আসতে হলে জাতীয় নেতৃবৃন্দকে তাদের নিজ নিজ মর্যাদার আসনে বসাতে হবে। জিয়া ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সিপাহশালার। তিনি ছিলেন, এগার হাজার প্রতিরোধকারী সেনার কমান্ডার। সেটাই ১০ এপ্রিল ১৯৭১ সালে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পরবর্তীতে বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জাতির উদ্দেশে একটি বক্তব্য দেন, যেটি প্রচারিত হয় ১১ এপ্রিল ১৯৭১ স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রে। সেখানে তাজউদ্দীন আহমদ বলেন First announced through Major Ziaur Rahman, to set up a full Fledged operational base from which it is administering the liberated areas. (Bangladesh Documents, Vol-I, Indian Government, page 284).
বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ (মরহুম) অলি আহাদ তার “জাতীয় রাজনীতি ১৯৪৭-৭৫” বইয়ে স্বাধীনতার ঘোষণা সম্পর্কে লেখেন, “…আমি জনাব আবদুল গাফ্ফার চৌধুরীর সহিত নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করিতাম তাহার বাসায় রাত্রিযাপন করিতে গিয়ে তাহারই রেডিও সেটে ২৭ মার্চ চট্টগ্রাম বেতারকেন্দ্র হইতে মেজর জিয়াউর রহমানের কণ্ঠস্বরে স্বাধীন বাংলার ডাক ধ্বনিত হইয়াছিল। এই ডাকের মধ্যে সেই দিশেহারা, হতভম্ব, সম্বিতহারা ও মুক্তিপ্রাণ বাঙালি জনতা শুনিতে পায় এক অভয়বাণী, আত্মমর্যাদা রক্ষার সংগ্রামে ঝাঁপাইয়া পড়িবার আহ্বান, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ের সংবাদ।”
ভারতে সরকারী ওয়েব সাইটে বলা আছে “While the where abouts of Mujib remained unknown, Major Ziaur Rahman announced the formation of the provisional government of Bangladesh over radio Chittagong. আর মার্কিন ষ্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতি On march 27 the clandestine radio announced the formation of a revolutionary army and provisional government under the leadership of Major Ziaur Rahman”.
মুক্তিযুদ্ধের ৫ নাম্বার সেক্টরের কমান্ডার মেজর মীর শওকত আলী (বীর-উত্তম) লিখেছেন, ” অষ্টম বেঙ্গল রেজিমেন্টের কমান্ডার জিয়াউর রহমান বিদ্রোহ ঘোষণা করলে এবং পরে স্বাধীনতাযুদ্ধের ডাক দিলে আমি সানন্দে যুদ্ধে যোগদান করি। ”
আওয়ামী লীগ সরকারের সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মেজর রফিক-উল ইসলাম (বীর-উত্তম) তার A tale of Millions বইয়ের ১০৫-১০৬ পৃষ্ঠায় লিখেছেন, “২৭ মার্চের বিকেলে তিনি (মেজর জিয়া) আসেন মদনাঘাটে এবং স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেন।”
একজন পাকিস্তানী সামরিক কর্মকর্তা হিসেবে জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিয়েছিলেন’ বলে সম্প্রতি দালিলিক সত্য প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ। সংস্থাটির ওয়াশিংটনস্থ সদর দফতর সম্প্রতি বাংলাদেশ বিষয়ক গোপন দলিল অবমুক্ত করলে এ বিষয়ে গত ৯ডিসেম্বর ঢাকায় প্রথম আলো পত্রিকায় সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান এর লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। ওয়াশিংটন থেকে গত ৮ ডিসেম্বর প্রেরিত নিবন্ধে মিজানুর রহমান খান সিআইএর গোপন দলিলের বরাত দিয়ে লিখেন- ‘সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন হলেও জিয়া ছিলেন ক্যারিশমেটিক নেতা । প্রায় ছয় বছরের নেতৃত্বে এক আশাবিহীন দরিদ্র ও বিশৃংখল অবস্থা থেকে তিনি বাংলাদেশকে সমস্যা মোকাবিলা করার উপযোগী করে তুলেছিলেন।’ ১৯৮২ সালের নভেম্বরে প্রস্তুত সিআইএ’র বাংলাদেশ বিষয়ক হ্যান্ডবুকে দেশের প্রথম দশকের রাজনীতি মূল্যায়ন করে বলা হয়, জিয়াউর রহমানের হত্যাকান্ড বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি নতুন অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করে। পর্যাপ্ত সামরিক নেতৃত্বের ঘাটতির সুযোগে সামরিক বাহিনী একটি প্রভাবশালী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। সিআইএর গোপন দলিলে জিয়াউর রহমানের প্রশংসার পাশাপাশি বলেছে ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রাজনীতিকরণকে তিনি আরো বিস্তৃত করেছিলেন।’
শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান, যিনি সামরিক বাহিনীর উর্দি ছেড়ে নিজেকে বেসামরিক ব্যক্তিতে পরিণত করেছেন। এর আগেও তিনি আরেকবার উর্দি ছেড়েছিলেন, সেটা ২৬ মার্চ উই রিভোল্ট বলার মাধ্যম।
জিয়া সৈনিক ছিলেন আজীবন, যে অর্থে একজন সৈনিক সব সময় যিনি যুদ্ধে থাকেন, থাকেন যুদ্ধক্ষেত্রে। সেই যুদ্ধ পাকিস্তানের দুঃশাসন থেকে অবরুদ্ধ বাংলাদেশকে মুক্ত হাওয়ায় শ্বাস নেওয়ার ব্যবস্থা করে। বাংলাদেশ বুক ভরে শ্বাস নেয়, তারা জানালা খুলে দেয়। বাংলাদেশকে অস্পষ্ট মেরুদ- থেকে একটা শক্ত মেরুদন্ডের ওপর দাঁড় করান তিনি। জিয়া অস্বাভাবিক রাষ্ট্র পাকিস্তান কে যুদ্ধের ময়দানে দাঁড়িয়ে স্বাভাবিক রাষ্ট্র বাংলাদেশের সৃষ্টি করেন। আবার সেই বাংলাদেশে যখন একদলীয় বাকশাল আর