জিয়া লাইব্রেরি ডেস্ক : বহু কিছু হারিয়ে গিয়েছে। বলতে দ্বিধা নেই BNP রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার অনবদ্যকীর্তি সংরক্ষণ ও প্রচারে ব্যর্থ। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ‘বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল’ দেশের প্রতিনিধি। The Tigers নামে পরিচিত। গত ৪ যুগে সবচে আনন্দের মুহূর্তগুলো ক্রিকেটের হাত ধরে এসেছে। বিশ্ব প্রান্তরে লাল সবুজ পতাকা যখন উড়ে তখন একজন বাংলাদেশী হিসাবে আমরা খুশী হই। সেই ক্রিকেটের লুকানো অধ্যায় শুনবো আজ।
রবিন মিলার, লন্ডনে সানডে টাইমস এ ক্রিকেট প্রতিবেদক ১৯৭৬ এ লেখেনঃ বিশ্বের যেকোন টেষ্ট ভ্যানু থেকে ঢাকা ষ্টেডিয়াম হতে পারে আদর্শ ভ্যেনু।
১৯৭৬ এ জিয়ার ব্যাক্তি উৎসাহে তৎকালীন Bangladesh Cricket Council – BCC এর সাধারন সম্পাদক রেজা ই করিম বাংলাদেশকে ICC – International Cricket Council এ সদস্য করার আবেদন করেন।
সমস্যা হয় বাংলাদেশ ক্রিকেট খেলার উপযুক্ত তা প্রমান করার। আমরা ICC এর সদস্য না তাই কোন দেশ এদেশে ক্রিকেট খেলতে রাজি না। তখন প্রেসিডেন্ট জিয়া দ্বারস্থ হন সাংবাদিক রবিন মিলারের। জিয়া আস্বস্ত করলেন কোন দেশ এখানে খেলতে এলে তাদের রাষ্ট্রীয় গেষ্ট গণ্য করে নিজ দায়িত্বে তদারকি করবেন।
১৯৭৬ এর মাঝামাঝি হঠাৎ মিলারের চিঠি এল। ইংল্যান্ডের Marlebone Cricket Club #MCC আসতে রাজি তবে সব খরচ বাংলাদেশকে বহন করতে হবে। বিচক্ষণ রাষ্ট্রপতি জিয়া বিনা বাক্যে রাজি হন। ক্রিকেট তখনো বাংলাদেশে অজনপ্রিয় খেলা, মুষ্টিমেয় মানুষ এই খেলায় আগ্রহ।
সিধান্ত হল জিয়া নিজে মাঠে উপস্থিত থেকে বহুল প্রচারের ব্যবস্থা করবেন। ICC সহ সারা বিশ্ব ক্রিকেটের চোখ পড়লো ঢাকাতে।
২৭ শে ডিসেম্বর ১৯৭৬ এ MCC ৪টি ম্যাচ খেলার জন্য বাংলাদেশে আসলে তাদের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সন্মান ও লাল গালিচা সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।
২৯ শে ডিসেম্বর তারা রাজশাহী যায় বাংলাদেশ উত্তর জোনের সাথে খেলতে।
৩১শে ডিসেম্বর – ১ জানুয়ারি দুই দিনের বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচটি সৌভাগ্য ক্রমে ড্র হয়। MCC ব্যাট করে ১ উইকেটে ১২৩ রানে ডিক্লার দেয় এবং বাংলাদেশকে ব্যাটিং আমন্ত্রণ করে। বাংলাদেশ উত্তর জোন ১১৯ ও সাত উইকেটে ১৮৫ রান করে ডিক্লার দেয় এবং দুদিন শেষে খেলার ফলাফল ড্র।
৩ ও ৪ জানুয়ারি চট্রগ্রামে বাংলাদেশ পশ্চিম জোনের সাথে দ্বিতীয় ম্যাচ এবং ১১ ও ১২ জানুয়ারি যশোরে বাংলাদেশ দক্ষিন জোনের সাথে খেলা হয়।
এর মাঝে বাংলাদেশ জাতীয় দলের ঐতিহাসিক অভিষেক ঘটে ৭-৯ জানুয়ারি ১৯৭৭ এ।
প্রেসিডেন্ট খেলার আগে খেলোয়াড়ের সাথে পরিচিত হন। কিছু সময় উপস্থিত থেকে খেলা উপভোগ করেন। ৩ দিন শেষে এই খেলার ফলাফল ড্র। ঐ খেলায় ঢাকার মাঠে তৎকালীন প্রায় ৪০ হাজার দর্শক উপস্থিত ছিল।
ঐতিহাসিক ম্যাচে শামীম কবির নেতৃত্ব দেন বাংলাদেশের। খেলোয়াড় ছিলেন রাকিবুল হাসান, মাইনুল হক, আশরাফুল হক, ওমর খালেদ রুমি, এসএম ফারুক, শফিকউল হক হিরা(WC) ইউসুফ বাবু , দৌলতুজ্জামান দীপু রায় চৌধুরী ও নজরুল কাদের লিন্টু।
সফল সমাপ্তি এবং MCC রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ২৬শে জুলাই ১৯৭৭ সালে বাংলাদেশ #ICC তে সহযোগী সদস্য হয়।
এবার দরকার একজন কোচ। জিয়াউর রহমানের প্রত্যক্ষ অনুরোধে MCC, রবার্ট জোন্স নামে একজন বিদেশী কোচ দেয় বাংলাদেশের জন্য।
জানুয়ারি ১৯৭৮ এ প্রথম বিদেশী দল শ্রীলংকা বাংলাদেশে খেলতে আসে। আইসিসি টুর্নামেন্ট খেলা সামনে তাই ১৪ জানুয়ারি ১৯৭৯ তে বাংলাদেশের অগ্রগতি বিচার করতে আবার সেই MCC ঢাকা আসে।
পরবর্তীতে রাকিবুল হাসানের নেতৃত্বে ১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ICC Trophy তে অংশ নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে আত্মপ্রকাশ করে বাংলাদেশ।
৪ ম্যাচের ২টা হেরে অন্য দু’টি তে ফিজি ও মালোয়েসিয়াকে হারিয়ে প্রতিযোগিতা থেকে বিদায় হয়।
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু’র নেতৃত্বে ৩১ মার্চ ১৯৮৬, Asia Cup এ বাংলাদেশ সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ওয়ান ডে ক্রিকেটে পাকিস্তানের বিপক্ষে অংশগ্রহণ করে।
ক্ষমতার দাম্ভিকতায় রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে ছোট করার চেষ্টা চলছে বহু কাল। তারা কি আদৌও এই কর্মবীরের কর্মযজ্ঞ বিলীন করতে পারবে? সেও কি সম্ভব? নিশিত গনতন্ত্রের দেশের রাজনৈতিক নেতারা কি পারবেন এই মুক্তিযোদ্ধা প্রেসিডেন্টের কর্ম মুছে দিতে??