জিয়া লাইব্রেরি ডেস্ক : বাংলাদেশে বিরোধী দল বিএনপি যখন তাদের ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে, তখন দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানকে নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন মন্তব্য বিতর্কের সৃষ্টি করেছে।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভূমিকাকে তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি তাদের রাজনীতির অন্যতম একটা ভিত্তি হিসাবে তুলে ধরে। তাঁর সেই ভূমিকা নিয়েই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন নানা প্রশ্ন সামনে আনছে।
আওয়ামী লীগ সরকার ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশে পট পরিবর্তনের নেপথ্যে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা তদন্তের কথাও বলছে।
বিএনপি নেতাদের অনেকে স্বীকার করেছেন যে তাদের দল নতুন নতুন সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে।
এই পরিস্থিতি বিএনপি কি সামাল দিতে পারবে- এনিয়েও দলটিতে আলোচনা রয়েছে।
বিএনপি তাদের দলকে মানুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য করার জন্য জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক হিসাবে তুলে ধরে থাকে।
দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে একটি সেক্টরের কমাণ্ডার ছিলেন।
কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের পক্ষ থেকে বিএনপির সেই ভিত্তিকে বিতর্কিত করার একটা চেষ্টা দৃশ্যমান হচ্ছে।
স্বাধীনতার ঘোষণা নিয়ে দুই দলের বিতর্ক নতুন নয়।
কিন্তু এখন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে শুরু করে দলের সব পর্যায়ের নেতারা মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে নতুন নতুন প্রশ্ন সামনে আনছেন, যাতে তাঁর বিরুদ্ধে নানা ষড়যন্ত্রে জড়িত থাকার অভিযোগকেও আনা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতাদের অনেকে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় নিয়েই এখন প্রশ্ন তুলেছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, “এই ১০ বা ১২ বছর আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ক্ষমতায় রয়েছে, সে কারণে বাঙালিরা বাংলাদেশ আইডেনটিটিটা খুঁজে পেয়েছে। এই আইডেনটিটি খুঁজে পেলেই মানুষের অনেক প্রশ্ন তার পরিচয় সম্পর্কে জানার। এটা একটা প্রয়োজন এবং আগ্রহ থেকে হয়। আর আজকের এই চাহিদা পূরণ হওয়ার জন্যই আমরা যা সত্য তা উদঘাটন করার জন্য সুযোগ সৃষ্টি করছি।”
আওয়ামী লীগের অন্য একাধিক সিনিয়র নেতা বলেছেন, বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ড এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে আইনগত দিক থেকে।
তারা মনে করেন, ঘটনার পেছনে ষড়যন্ত্র ছিল এবং এখন তা চিহ্নিত করার একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। সেজন্য সরকার ৭৫-এর হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যের শক্তি চিহ্নিত করার জন্য একটি কমিশন গঠন করতে যাচ্ছে।
আর তাতে জিয়াউর রহমানের ভূমিকাও তদন্ত করা হবে-এমন ধারণা আওয়ামী লীগ নেতারা দিচ্ছেন।
তারা বলেছেন, “৭৫-এ শেখ মুজিবকে হত্যার ঘটনায় বেনিফিশিয়ারি জিয়াউর রহমান, সেজন্য নেপথ্যের রাজনীতি উদঘাটনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।”
লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমেদ মনে করেন, মুক্তিযুদ্ধে জিয়াউর রহমানের ভূমিকা নিয়ে যে বিতর্ক তোলা হচ্ছে, সেটা রাজনৈতিক বক্তৃতা। তবে ৭৫ সালের হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই আওয়ামী লীগ বিএনপিকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলার চেষ্টা করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।
“৭১ এর ইস্যুতো বিএনপির জন্য খুব কনসার্ন না। কারণ ৭১এ জিয়াউর রহমানের ভূমিকা সবাই জানেন। কনসার্নটা হচ্ছে ১৫ই অগাস্ট। এখন এটা বিএনপির জন্য অস্বস্তিকর। কারণ হচ্ছে তারা এর জুতসই জবাব দিতে পারছে না।”
মি: আহমেদ আরও বলেছেন, “জিয়া যত বড়ই মুক্তিযোদ্ধা হোন না কেন এবং জয় বাংলা শ্লোগান দিয়েই উনি মুক্তিযুদ্ধ করুক না কেন, ৭৫ -এর নভেম্বরের পরে যখন জিয়ার কাছে ক্ষমতা চলে আসলো,তারপর থেকে কিন্তু আওয়ামী লীগ-বিরোধী কনসিকোয়েন্স উনি ডেভেলপ করেছেন তাঁর রাজনৈতিক স্বার্থে।”
“সেখানে অভিযোগ হলো যে, ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ যেটা খন্দকার মোশতাক জারি করেছিলেন, সেটি পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে জিয়াউর রহমান সংবিধানের অংশ করেন। তা তিনি কেন করেছিলেন-এর কোন জুতসই জবাব কিন্তু বিএনপি দিতে পারে না।”-এই মন্তব্য করেন লেখক মহিউদ্দিন আহমেদ।
এক যুগেরও বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি এবার ৪২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষির্কী পালন করছে, যখন সরকারের সিদ্ধান্তে দুর্নীতির মামলার সাজা স্থগিত করার পর দলটির শীর্ষ নেত্রী খালেদা জিয়া রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড না করার শর্তে মুক্ত রয়েছেন। তার পরিবার নতুন করে সাজা স্থগিতের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবারও সরকারের কাছে আবেদন করেছে।
আরেকজন শীর্ষ নেতা তারেক রহমান নির্বাসনে বিদেশে রয়েছেন। এমন পরিস্থিতিতে জিয়াউর রহমানকে নিয়ে আওয়ামী লীগের বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টাকে বিএনপি নেতাদের অনেকে তাদের জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ হিসাবে দেখছেন।
দলটির একটি পেশাজীবী সংগঠনের নেতা জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা বলেছেন, “পরিস্থিতি নিয়ে প্রতিবাদ বা কথা বলার চেষ্টা আমরা করবো। কিন্তু একটু টুঁ-শব্দ করলেই দেখা যায়,নানান ধরণের মামলা দেয়া হয়। সেই জায়গাটায় আমাদের আসলে সারভাইভ করাটাই কঠিন।”
অবশ্য বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, জিয়াউর রহমানকে বিতর্কিত করার চেষ্টা তারা রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করছেন।
“প্রথমদিকে তারা মুক্তিযুদ্ধে তার ভূমিকা নিয়ে কথা বলে। কিন্তু তা ধোপে টেকেনি। এখন এরা শুরু করেছে নতুন একটা অপপ্রচার।সেটা হচ্ছে ১৫ই অগাস্টের হত্যাকাণ্ড নিয়ে। ইতিমধ্যে তার বিচার শেষ হয়ে গেছে। সেটাকে এখন আবার যদি ঐভাবে চেষ্টা করা হয়, সেটাও ধোপে টিকবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।”
একইসাথে মি: আলমগীর বলেছেন, “এটা অবশ্যই আমাদের প্রচারণা এবং বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আমরা যতটুকু পারি খণ্ডন করছি এবং আমরা সত্য প্রতিষ্ঠিত করছি।”
বিএনপি নেতারা বলেছেন, তারা নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে এগুনোর চেষ্টা করছেন।