জিয়া লাইব্রেরি ডেস্ক : আজ ১৯শে জানুয়ারী সাবেক রাষ্ট্রপতি দেশের বরেণ্য মুক্তিযুদ্ধা শহীদ জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের ৮৫ তম জন্ম বার্ষিকি ।১৯৮১ সালের ৩০শে মে চট্রগ্রাম সার্কিট হাউসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একদল বিপদগামী সদস্যের হাতে প্রাণ হারান এই ক্ষণজন্মা ও দেশপ্রেমিক ব্যক্তি ।
জিয়াউর রহমান ১৯৩৬ সালের ১৯ জানুয়ারি বগুড়া জেলার বাগবাড়িতে জন্ম গ্রহণ করেন ।তিনি ১৯৫৩ সালে কাকুল মিলিটারি একাডে মিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন এবং ১৯৫৫ সালে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট হিসেবে কমিশন লাভ করেন। ১৯৬৫ সালে পাক ভারত যুদ্ধে তিনি অংশ গ্রহণ করেন ও ১৯৬৬ সালে তিনি পাকিস্তান মিলিটারি একাডেমীতে ইনস্ট্রাক্টর পদে নিয়োগ লাভ করেন। ১৯৬৯ সালে তিনি জয়দেবপুরে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে দ্বিতীয়-অধিনায়ক পদে দায়িত্ব লাভ করেন।১৯৭০ সালে জিয়াউর রহমান চট্রগ্রামে অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের দ্বিতীয় অধিনায়ক পদে যোগ দান করেন। ১৯৭১ সালে জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীণতার পক্ষে ঘোষক প্রদান করে দেশব্যাপী ব্যাপক আলোচিত হয়ে উটেন ।১৯৭৫ সালের ২৫ আগস্ট জিয়াউর রহমান চীফ অফ আর্মি স্টাফ নিযুক্ত হন।১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর খালেদ মোশার্রফ এক সামরিক অভ্যুত্থান ঘটান।এই সময় জিয়াউর রহমানকে গৃহবন্দী করা হয়। কিন্তু ৭ই নভেম্বর সিপাহী জনতা বিপ্লব তাঁকে রাজনৈতিক ক্ষমতার কেন্দ্র বিন্দুতে নিয়ে আসে। ১৯৭৭ সালের ২১শে এপ্রিল জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রপতি পদে অধিষ্ঠিত হন এবং ১৯৮১ সালের ৩০শে মে মৃত্যু বরণ করেন ।
জিয়াউর রহমানের জীবনের শ্রেষ্ট অর্জন ছিল দেশের স্বাধীণতা যুদ্ধে অংশ গ্রহণ ।১৯৭১ সালে রাতের অন্ধকারে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনী দেশের নিরস্ত্র মানুষের উপর ঝাপিয়ে পড়লে জিয়াউর রহমান চট্রগ্রামের কালোর ঘাট বেতার কেন্দ্র করে স্বাধীণতার ঘোষনা দেন ।তিনি শুধু স্বাধীণতার ঘোষনাই দেন নাই ,দীর্ঘ নয় মাস রনাঙ্গনে যুদ্ধ করে শত্রুদের মোকাবেলা করেছেন । তিনি যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে ১৯৭১ সালের জুন মাস পর্যন্ত ১ নং সেক্টরের অধিনায়ক এবং পরে ‘জেড’ ফোর্সের প্রধান হিসেবে যুদ্ধে নেতৃত্ব প্রদান করেন ।স্বাধীণতা যুদ্ধে কৃতিত্ব পূর্ণ অবদানের জন্য তাঁকে বীর উত্তম পদকে ভূষিত করা হয়েছিল।বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের ধারণা উপস্থাপন ছিল জিয়াউর রহমানের আরেকটি কৃতিত্ব ।তিনি বিশ্বাস করতেন যে, বাংলাদেশে বহু মত ও ধর্মের জাতি গোষ্টির বসবাস ।তাদের ভাষা, কৃষ্টি,জীবন, দর্শন , সংস্কৃতি সম্পূর্ণ আলাদা ।তাই ভাষার ভিত্তিতে তাদের উপর জাতীয়তা চাপিয়ে দেওয়া সমুচিন হবে না।তিনি প্রচলিত বাঙ্গালী জাতীয়তাবা দের পরিবর্তে বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদকে রাষ্ট্রের মূলনীতি হিসাবে প্রবর্তন করেন ।তাঁর এই সুচিন্তিত রাজনৈতিক দর্শন পরবর্তীতে দল মত নির্বিশেষে সকল মানুষ সমর্থন করেছে।জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকাকালে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী ও গতিশীল করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন ।কলকারখানায় ডাবোল শিফট চালু করে উৎপাদন বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করেন।অলাভজনক সকল রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প প্রতিষ্টান ব্যক্তি মালিকানায় হ্তান্তরের উদ্যোগ নেন ।খাল কাঠা প্রকল্প গ্রহণ করে দেশের সকল অনাবাদী ও পতিত জমিকে চায়াবাদের আওতায় নিয়ে আসেন ।কৃষক ও কৃষিখাতে ভর্তুকি প্রদানের পদক্ষেপ নেন ।দূনীর্তির বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।বেসরকারি সেক্টর সমুহের উন্নয়নে উদ্যোগ নেন ।তাঁর এই সকল অর্থনৈতিক বিপ্লব নিয়ে আসে ব্যাপক সাফল্য ।খাদ্য উৎপাদনে দেশ স্বয়ং সম্পূর্ণতা অর্জন করে তলাবিহিত ঝুড়ির অপবাদ গুছিয়ে ইমাজিং টাইগারে পরিণত হয় ।তিনি ১৯ দফা সম্বেলিত রাজনৈতিক দর্শন ঘোষনা করে প্রতিষ্টা করেন রাজনৈতিক সংগঠন বিএনপি বা বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল ।তাঁর রাজনৈতিক দর্শনের লক্ষ্য ছিল আর্থ-সামাজিক স্বনির্ভরতা অর্জন ও গ্রামীণ উন্নয়ন সাধন,জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, কৃষি বিপ্লব খাদ্যে স্বয়ম্ভরতা অর্জন, নিরক্ষতা দূরীকরণ ও নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ।
জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় থাকা কালে দেশে শান্তি শৃঙ্খলা স্থাপনে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন।পারস্পরিক সমঝোতা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে বর্হিবিশ্বের সহিত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছিলেন ।এই সময় বাংলাদেশের ভাবমুর্তি উজ্বলতর ছিল ।তিনি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ গুলোর সাথে সুসম্পর্ক গড়ে তোলেন এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো নিয়ে একটি সংগঠন গড়ে তোলার প্রয়োজন অনুভব করেছিলেন ।১৯৮৫ সালে দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) প্রতিষ্টা তাঁর সেই স্বপ্নের ফসল। এই সময় বাংলাদেশের সাথে মুসলিম বিশ্বের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উটে।যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সাথেও বাংলাদেশের সম্পর্কের উন্নতি হয়।বাংলাদেশ ১৯৭৮ সালে জাতিসংঘের কার্যক্রমে সক্রিয় ভাবে সম্পৃক্ত হয় এবং নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্য পদ লাভ করে ।
জিয়াউর রহমানের সময়ে দেশে গণতন্ত্রের পথ সুগম হয়।মূলত এইসময় দেশে বহু দলীয় গণতান্ত্রের সূচনা হয়েছিল।সংবাদপত্র স্বাধীন ভাবে কাজ করার সুযোগ পায় ।নিরক্ষরতা দূরীকরণে সেই সময় দেশ ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করে।দূনীর্তির ও স্বজনপ্রতির ব্যাপারে তিনি নিজে যেমন ছিলেন আপোষহীন তেমনি এই সময় কেহ দূনীর্তি ও স্বজনপ্রীতি করার সুযোগ পায়নি ।তিনি যুব সমাজকে কাজে লাগাতে প্রতিষ্টা করেন যুব কমপ্লেক্স।তিনি দেশে উন্নয়নের যে ধারা সূচনা করেছিলেন তাঁর হত্যাকান্ডের মধ্য মধ্য দিয়ে তা বন্ধ হয়ে য়ায় । জিয়াউর রহমানের জীবন কাল ছিল মাত্র ৪৫ বছরের।কিন্তু এই ৪৫ বছরে তিনি এমন অনেক বৈপ্লবিক কাজ করে গেছেন যে জন্য দেশের মানুষ আজও তাঁকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করে।একজন জিয়াউর রহমান মৃত্যু বরণ করলেও তাঁর মহৎ কর্মের জন্য মানুষের অন্তরে বেঁচে থাকবেন অনন্তকাল ।
লেখক- কলাম লেখক ও রাজনীতিবিদ , নিউইয়র্ক ।