মুক্তিযুদ্ধে জেড ফোর্সের সমরগাথা : পর্ব- ২

জিয়া লাইব্রেরি ডেস্ক : এতকিছুর পরও ডিসেম্বরের ৪ তারিখের আগে কামালপুর মুক্ত হয় নি!

কাজেই ৩১ জুলাই জিয়ার নির্দেশে ১ম সেট-পিস হিটটি হয়েছিল রীতিমত ‘বাঘের ডেরায়’। সেটি ছিল অজানা ভয়, দুঃসাহসিকতা আর রোমাঞ্চ মিশ্রিত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।

পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ওয়ার ম্যাপে বৃহত্তর টাংগাইল ও ময়মনসিংহের দায়িত্বে ছিল মেজর জেনারেল জামশেদের ৩৬ অ্যাডহক ডিভিশন। ১৮৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই এলাকাটিতে ২টি রাস্তা ছিল ঢাকার দিকে মুক্তিবাহিনীর অগ্রসর হওয়ার। একটি হালুয়াঘাট-ময়মনসিংহ হয়ে, অন্যটি কামালপুর-জামালপুর দিয়ে। এটি আটকানোর দায়িত্বে ছিল ব্রিগেডিয়ার কাদিরের পাক আর্মির ৯৩ ব্রিগেড – যার দুটি রেজিমেন্ট যথাক্রমে ৩৩ পাঞ্জাব এবং ৩১ বালুচ।

৩৩ পাঞ্জাব অবস্থান নিয়েছিল হালুয়াঘাটে আর ৩১ বালুচ অবস্থান নিয়েছিল কামালপুর, নকশী আর বারোমারিতে। কামালপুরে ৩১ বালুচের সাথে ছিল ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স আর আর ১ প্লাটুন রাজাকার। কামালপুর বিওপির সিও ছিল ক্যাপটেন আহসান মালিক। প্রচুর শক্তিশালী অস্ত্র আর গোলাবারুদের পাশাপাশি ৮১ মি.মি. ৩টি মর্টার ছিল কামালপুর বিওপিতে।

অন্যদিকে মেজর মইনের ১ম বেঙ্গল ব্যাটালিয়নে সৈন্য ছিল সর্বসাকুল্যে ৮৫০ জন। ৩১ জুলাই রাত ৩টায় এই যুদ্ধ শুরু হয়। জেড ফোর্সের ১ম সম্মুখ সমর কামালপুর অপারেশনে জিয়াউর রহমান নিজে উপস্থিত ছিলেন যুদ্ধ সমন্বয় করার জন্য।

রাত ৩:০০-র দিকে জিয়া ও মেজর মইন ১ম বেঙ্গল ব্যাটালিয়ন নিয়ে পাকিস্তান আর্মির ঘাঁটি থেকে প্রায় ১১০০-১২০০ গজ দূরে অবস্থান নেন।

সে রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল।

পরিকল্পনা মোতাবেক –

১. ক্যাপটেন মাহবুব শত্রু ঘাঁটির পেছনে অবস্থান নেন তাঁর কোম্পানি সহ।

২. ক্যাপ্টেন হাফিজ ও ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন ৬০০ গজ ইনসাইড এনিমি লাইন অগ্রসর হয়ে পাটক্ষেতে অবস্থান নেন।

৩. মেজর মইন তাঁর ওয়ারলেস অপারেটর এবং ফ্লা. লে. লিয়াকত সহ পাটক্ষেতে অবস্থান নেন।

৪. টিলায় মেজর জিয়া হালকা কামান ও হেভি মেশিনগান সহ অবস্থান নেন।

৫. কাট অফ পার্টি হিসেবে একটি বাহিনী কামালপুর-বকশীগঞ্জ সড়কে মাইন পুঁতে রেখে কামালপুর-শ্রীবর্দি জংশন এবং উঠানীপাড়ায় অবস্থান নেন যাতে বকশীগঞ্জ থেকে হঠাৎ কোন পাকিস্তানি রিইনফোর্সমেন্ট ৩১ জুলাই রাতে কামালপুরে আসতে না পারে।

জিয়ার অবস্থান থেকে কামানের গোলা বর্ষণের মাধ্যমেই যুদ্ধ শুরু হয়। রাত সাড়ে ৩টায় ক্যাপটেন সালাউদ্দিন মমতাজ তাঁর ২ প্লাটুন সৈন্য নিয়ে শত্রুঘাঁটিতে ঢুকে পড়েন। সেখানে তিনি বিওপির একদম কাছে গিয়ে মেগা ফোনে পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্যে বলতে থাকেন – “আভি তক ওয়াক্ত হ্যায়, শালা লোক সারেন্ডার করো, নেহি ত জিন্দা নেহি ছোড়েঙ্গা।”

সালাউদ্দিন মমতাজের অসীম সাহসে আর তাঁর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রচন্ড আক্রমণে পাকিস্তানিদের ১ম ডিফেন্স কর্ডন শেল প্রুফ বাংকারে ঢুকে পড়ে।

শহীদ ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ বীরউত্তম

এ সময় সালাউদ্দিন মমতাজ আরও সাহসী হয়ে উঠে ২০-২৫ জনকে নিয়ে বিওপির কমিউনিটি সেন্টারে ঢুকে পড়েন। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই তিনি কমান্ড করছিলেন। তাঁর সহযোদ্ধারা তাঁকে নিরাপদ পজিশন নিতে বলেও লাভ হয় নি। হঠাৎই মেশিন গানের গুলি এসে ঢোকে তাঁর মাথায়। মর্টারের গোলাও এসে পড়ে পাশে।

লুটিয়ে পড়েন এই ‘বীরউত্তম’…স্বপ্নের স্বাধীনতার সোনালি রোদের স্পর্শ তাঁর পাওয়া হলো না আর…

এক পর্যায়ে সেখানে আগ্নেয়াস্ত্রের পরিবর্তে হাতাহাতি আর বেয়নেট দিয়ে যুদ্ধ হয় বাংকারের ভেতরে।

সালাউদ্দিন মমতাজ নিহত হওয়ার খবর জানতে পেরে মেজর মইন ওয়ারলেসে ক্যাপ্টেন মাহবুবকে কমান্ড করেন পেছন থেকে আক্রমণের জন্য। কিন্তু ক্যাপ্টেন মাহবুবের সাড়া না পেয়ে তিনি ঝোপঝাড় গাছের আড়াল থেকে খোলা জায়গায় চলে আসেন যাতে ওয়ারলেস ভালোভাবে কাজ করতে পারে। দুর্ভাগ্য সাথে সাথেই এক ঝাঁক মেশিনগানের গুলি এসে তাঁর ওয়ারলেস অপারেটর শহীদ হন। এ সময় তাঁর ওয়ারলেস সেটটিও অকেজো হয়ে যায়। মেজর মইন হতভম্ব হয়ে এসময় চিৎকার করে নির্দেশ দিতে থাকেন। খুব দ্রুত ভোরের আলো ফুটে ওঠে। এ সময় তাঁরা দেখতে পান চারদিকে হতাহতের ছড়াছড়ি। ক্যাপটেন হাফিজ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে আছেন। লে. মান্নানও আহত হয়েছিলেন। জিয়া এ সময় উদ্ধারকাজে যোগ দেন। গোলাগুলি চলা অবস্থাতেই জিয়া, মইন, লিয়াকতরা মিলে হাফিজ, মান্নান সহ অন্য আহত যোদ্ধাদের উদ্ধার করে পিছু হটেন।

অন্যদিকে ২টি ১২০ মি. মি. মর্টার আর বেশ কিছু সেনা সহ বকশীগঞ্জ থেকে কামালপুরের দিকে আসতে থাকা ৩টি লরি উড়ে যায় কাট অফ পার্টির পুঁতে রাখা মাইনে। তাদের অ্যামবুশে ১০ জন পাকিসেনা নিহত এবং ১০-১১ জন আহত হয়। ১ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন, ২-৩ জন আহত হন।

এ যুদ্ধে মোট ৩৫ জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন আর আহত হন ৫৭ জন যা মোটামুটি ১ম বেঙ্গলের এক দশমাংশ।

কামালপুরের সেই যুদ্ধ ৩১ বালুচ রেজিমেন্টের জন্য ছিলো নাইটমেয়ার।

তারা ধারণাই করতে পারে নি যে নাতিদীর্ঘ প্রশিক্ষিত যোদ্ধাদেরকে নিয়ে জেড ফোর্স এত শক্ত কামড় দিতে পারে।

ক্যাপ্টেন হাফিজউদ্দিন আহমেদ স্বাধীনতার দলিল পত্রের ১০ম খন্ডে জানিয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়েছিল সে যুদ্ধে।

শাফায়াত এবং মইন দু’জনেই বলেছেন –

টানা ৩ দিন পাকিস্তান আর্মির হেলিকপ্টার ঢাকা থেকে কামালপুর আসা যাওয়া করেছে কেবল পাকিস্তান আর্মির লাশ আর আহতদের সরিয়ে নেওয়ার জন্য।

যুদ্ধের পর জেনারেল মানেকশ হেলিকপ্টারে করে জেড ফোর্স হেড কোয়ার্টারে আসেন আর উচ্ছসিত প্রশংসা করে বলেন:

“জেড ফোর্স শোড আপ রিয়াল টাইগার ক্যারেক্টার!”

এমনকি এটাও বলেন যে তার ধারণাতেও ছিল না যে জেড ফোর্স এমন অপারেশনের সাহস রাখে।

শহীদ সালাউদ্দিন মমতাজ স্মরণে কামালপুরে স্বাধীনতা সৌধ।

৩১ বালুচ রেজিমেন্টকে এমন একটি সর্বো”চ দুঃস্বপ্ন উপহার দেয়ার পরও এ যুদ্ধে হেরে যাওয়ার কারণ মূলত ৪টি:

[১]

২৮ জুলাই সন্ধ্যায় রেকি করার সময় ক্যাপ্টেন সালাউদ্দিন মমতাজ, লে. মান্নান, সুবেদার আবদুল হাই, সুবেদার হাশেম, নায়েক শফি ভুলে কামালপুর বিওপির অবজার্ভেশন পোস্টে ঢুকে পড়েন এবং ২ জন পাকিস্তানি সেনার সামনে পড়ে যান। ২ জনকেই মেরে ফেললেও সেটাই বিপদ বাড়িয়ে দেয়। ৩১ বালুচ সতর্ক হয়ে যায়। এর জের ধরে ২৯ জুলাই স্বয়ং লে. জে. নিয়াজী কামালপুরে আসেন। বলাই বাহুল্য এর ফলে তারা সেনাসংখ্যা এবং গোলাবারুদ প্রচুর বাড়িয়েছিল যা যুদ্ধ চলাকালে মেজর মইন তীব্রভাবে টের পান।

[২]

ভারতীয় সেনাবাহিনী যে ওয়ারলেস সেটগুলো দিয়েছিলো জেড ফোর্সকে সেগুলো নিম্নমানের এবং ত্রুটিপূর্ণ ছিল বলে মেজর মইন জেনারেল মানেকশ’ কাছে অভিযোগ করেছিলেন। মেজর মইনের মতে ক্যাপ্টেন মাহবুবকে সময়মতো ওয়ারলেসে কমান্ড করতে পারলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম হতো এবং শত্রুপক্ষের ক্যাজুয়ালটি আরো বেশী হতো। অতি দরকারের সময় ওয়ারলেস কাজ না করা ছিল মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা।

[৩]

যুদ্ধের সেই সময়টায় মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিল এবং আগের কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়ায় পাটক্ষেতে ১ ফুট পানি জমে গিয়েছিল। এ ধরনের যুদ্ধে ক্রলিং ও কুইক মুভের যে প্রয়োজন হয় তার বিপরীতে এই ব্যাপারটাকে ‘ক্রুশাল লুজিং ফ্যাক্টর’ হিসেবে বিবেচনা করেছেন মেজর মইন।

[৪]

কামালপুর যুদ্ধে ঘোর অন্ধকার আর মুষলধারে বৃষ্টির কারণে যুদ্ধ প্রায় মিনিট ৩০ দেরীতে শুরু হয়। কিন্তু এদিকে জেড ফোর্সের প্রিএইচ আওয়ার বোমাগুলোও বিস্ফোরিত হতে থাকে । ফলে নিজেদের বোমাতেও ১ম বেঙ্গল ধরাশায়ী হয়েছিলো সে রাতে।

কামালপুর যু্দ্ধের আহত-শ্রান্ত যোদ্ধাদের নিয়ে ফিরে আসেন জিয়া ও মইন। সেদিন ৩১ জুলাইতেই মেজর শাফায়াত জামিলকে জিয়া ৩য় বেঙ্গল সহ পাঠান জেড ফোর্সের ২য় অপারেশনে।

এটিই ছিল বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাটের যুদ্ধ…

১৯৭১, জুলাই ৩১, দুপুরবেলা যাত্রা শুরু করেন ৩য় বেঙ্গলের সৈন্যরা। বাম থেকে ৪র্থ কমান্ডার শাফায়াত জামিল, ৫ম লে. নুরুন্নবী, ৭ম সুবেদার হাফিজ এবং তাঁর পেছনে ক্যাপ্টেন আনোয়ার। লক্ষ্য বাহাদুরাবাদ ফেরীঘাট।

কামালপুরের শাহ কামাল (রাঃ)-এর মাজারের পাশ দিয়ে বাংলাদেশে ঢোকেন শাফায়াত জামিল। এর পর ৩টি ছোট বড় নদী আর কাদাপানিতে হেঁটে প্রায় ২৫ মাইল পেরিয়ে সবুজপুরে পৌঁছান। সেখান থেকে ১২টি নৌকায় অপারেশন জোনে পৌঁছান।

ব্রহ্মপুত্র আর যমুনার সাথে যেখানে তিস্তা এসে মিশেছে তার বিপরীতে ব্রহ্মপুত্রের পূর্বপাড়ে বাহাদুরাবাদ ফেরিঘাট যেখান থেকে চিলমারি বন্দর, কুড়িগ্রাম, উত্তরাঞ্চল আর ব্রহ্মপুত্রের দুই পাড়ে মুক্তিযোদ্ধা ঘাঁটিগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়।

১ আগস্ট ভোর রাত ৫টায় লে. নুরুন্নবির ডেল্টা কোম্পানি ১ম হিট করে। তাদের ব্যাকআপ দেয় লে. আনোয়ারের আলফা কোম্পানি। আক্রমণে ছিল মর্টার প্লাটুন আর স্বয়ং শাফায়াত জামিল তাঁর ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টার নিয়ে অপারেশন ফ্রন্টে ছিলেন।

৩০ মিনিটের সেই যুদ্ধে ৩টি বার্জ, ২টি শান্টিং ইঞ্জিন ধ্বংস করা হয় আর ২টি বগিতে হেভি মেশিন গানের ব্রাশ ফায়ার করে বেশ কিছু পাকিসেনা হতাহত করা হয়। এর ফলে বাহাদুরাবাদ ঘাট ব্যাপকভাবে ধ্বংস হয় আর উত্তরাঞ্চলের সাথে বাহাদুরাবাদ রেলরুট বন্ধ হয়ে যায়।

এই অপারেশনে জেতার পর ৩য় বেঙ্গল দেওয়ানগঞ্জ স্টেশন এবং সুগারমিল রেস্ট হাউজের পাকিস্তানি ঘাঁটিতে আক্রমণ করে সফল হন। পুরো অভিযানে সবুজপুরের মানুষ শাফায়াত জামিলের বাহিনীকে আপনজনের মতো আতিথেয়তা দেয়। এর জের ধরে পরবর্তী সময়ে সবুজপুর গ্রামটিকে পাকি বাহিনী প্রতিশোধ স্পৃহায় জ্বালিয়ে ছাই করে দেয়, রক্তাক্ত ম্যাসাকার চালায়।

এরই মাঝে জেড ফোর্সের ৩য় অপারেশনে জিয়া আবার নিজে আবার সম্মুখ সমরে হাজির হন ৩ আগস্ট ভোর ৩টা ৪৫-এ। অপারেশনটির দায়িত্ব ছিল ৮ম বেঙ্গলের উপর।

সেটি নকশী বিওপির যুদ্ধ…

শেরপুরের ঝিনাইগাতী থানার এ যুদ্ধে পাকিস্তানিদের প্রচুর ক্ষয়ক্ষতি হয়। মুক্তিযোদ্ধারা ‘রান অ্যান্ড ক্রল’ করে বিওপির ৫০ গজের ভেতরে ঢুকে গিয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধাদের আক্রমণের তীব্রতায় পাকিস্তানি সেনারা বিওপি ছেড়ে পাশের ক্ষেতে পালিয়েছিল। তারপরও এ যুদ্ধে হেরে যাওয়ার মূল কারণ পাকিবাহিনীর প্রচন্ড মর্টার আক্রমণ। তাদের পুঁতে রাখা মাইনও আরেকটি কারণ। সেদিন আক্রমণে ছিল ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদের ব্রাভো কোম্পানি আর লে. মোদাসেরের ডেল্টা কোম্পানি। সুবেদার হাকিমের ইপিআর কোম্পানিটি ছিল কাট অফ পার্টি হিসেবে। ফায়ারিং কভার দেয়ার দায়িত্বে ছিলেন ব্যাটালিয়ন কমান্ডার মেজর আমিনুল হক। আর বিওপির পাশে শালবনে ফরোয়ার্ড এরিয়া অ্যাসেম্বলী থেকে জিয়া ওয়ারলেস যোগাযোগের মাধ্যমে যুদ্ধ কোঅর্ডিনেট করছিলেন। সে যুদ্ধে মেশিনগানের গুলিতে ক্যাপ্টেন আমিন আহত হলে  ব্রাভো কোম্পানি মনোবল হারায়। মোট ১২ জন মুক্তিযোদ্ধা সে যুদ্ধে শহীদ হন। ক্যাপ্টেন আমিন আহমেদ আহত হয়ে মাটিতে পড়ে থাকলে মেজর আমিনুল হক ২ জন এসিও আর জেসিওকে সঙ্গে নিয়ে নিজের জীবন বিপন্ন করে হেভি মেশিনগানের ফায়ারিং-এর ভেতর তাঁকে উদ্ধার করেন।

বাহাদুরাবাদ ঘাট আর দেওয়ানগঞ্জে যুদ্ধবিজয়ী ৩য় বেঙ্গল তেলঢালায় ফেরার পথে শাহ কামালের মাজারের পাশে একটি জিপ গাড়ির পাশে মেজর জিয়াকে দুঃশ্চিন্তিত দেখতে পায়। ফিরতে দেরী দেখে জিয়া ধারণা করেছিলেন ৩য় বেঙ্গল বাহাদুরাবাদ অপারেশনে হয়তো ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে। কিন্তু সাফায়াত জামিল দেওয়ানগঞ্জ অপারেশনের কথা জানিয়ে জিয়াকে বলেন এখন দেশের ভেতরে থেকে যুদ্ধ চালানো কোনো ব্যাপারই না।

শুনে জিয়া হেসে ওঠেন, বলেন –

“তাহলে তো একবার সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই হয়।”

এখানেই শুরু হয় জেড ফোর্স আর রৌমারির ইতিহাস…

রৌমারি হাইস্কুলের সামনে মুক্তিযোদ্ধাদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য রাখছেন জেড ফোর্স অধিনায়ক মেজর জিয়াউর রহমান ।

৬ই আগস্ট ৩য় বেঙ্গলের লে. নুরুন্নবির ডেল্টা কোম্পানিকে রৌমারি মুক্তাঞ্চলের প্রতিরক্ষা ব্যূহ তৈরির দায়িত্ব দেয়া হয়। এর আগে পাকিস্তানী বাহিনী ৪ আগস্ট চর কোদাল কাটি নামক রৌমারির নিকটবর্তী স্থান দখল করে নেয়। বাহাদুরাবাদ এবং দেওয়ানগঞ্জ অপারেশনে দুঃসাহসিক সাফল্যের জন্যই ডেল্টা কোম্পানিকে রৌমারি ডিফেন্সের দায়িত্ব দেন জিয়া সাফায়াত জামিলের সুপারিশ ক্রমে।

৮ আগস্ট ফোর্স কমান্ডার জিয়ার নির্দেশে লে. নুরুন্নবি রৌমারির স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে নগর কমিটি তৈরি করেন এবং স্বাধীন বাংলাদেশের ১ম বেসামরিক প্রশাসন চালু করেন।

১১ আগস্ট মেজর জিয়া ভারতীয় মেজর জেনারেল গুলবত সিং গিলকে সঙ্গে নিয়ে রৌমারি পরিদর্শনে আসেন তেলঢালা থেকে।

১৩ আগস্ট জিয়ার নির্দেশে লে. নুরুন্নবী রৌমারি হাইস্কুলে স্বাধীন বাংলাদেশের ১ম সেনানিবাস স্থাপন করেন। সেখানে সামরিক স্কুলও চালু করা হয় যেখান থেকে ১৮-২০ হাজার মুক্তিযোদ্ধা ট্রেনিং নিয়েছে।

জিয়া লাইব্রেরী অনলাইন
Logo