নারীর ক্ষমতায়নে শহীদ জিয়ার অবদান

জিয়া লাইব্রেরি ডেস্ক : একজন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সাফল্যগাঁথা এক দুই কলামে লেখা সম্ভব না, তাই আজকে এ লেখায় নারী উন্নয়নে, নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে মহৎ এ নেতার অবদানের কথা স্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়। বাংলাদেশকে, বাংলাদেশের নারী সমাজকে আত্মবিশ্বাস ও আত্মসম্মানের পথ প্রথম দেখিয়েছিলেন যিনি তিনি হলেন শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এদেশের নারীদের আজ যতটুকু অগ্রগতি, যতটুকু প্রাপ্তি তার সিংহভাগ যার অবদান তিনি জিয়াউর রহমান। নারীর ক্ষমতায়ন এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নারী তার নিজের অবস্থান বা আপেক্ষিক সামাজিক আত্মমর্যাদা সম্পর্কে সচেতন হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানই সর্বপ্রথম নারীদের আপন শক্তি ও বুদ্ধিমত্তা অর্জনের মধ্য দিয়ে সক্রিয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে নারী-পুরুষ বৈষম্য দূরীকরণের গুরুত্ব তুলে ধরেন। মহান এ নেতার সূদুর প্রসারী চিন্তা ও পরিকল্পনা বাস্তাবায়ন হয়েছিল বিধায় নারী সমাজ আজ এর সুফলতা উপভোগ করছে। জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করার স্বার্থে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক উভয় দিক থেকেই নারীদের সামগ্রিক উন্নতির উপর বিশেষ জোর দেন। শুধু জিয়াউর রহমান নন, তার উত্তরসূরী হিসেবে বেগম খালেদা জিয়াও পরবর্তীতে তার তিন (৩) মেয়াদে তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখেছেন।

মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় চালু : ‘এ বিশ্বে যা কিছু মহান চিরকল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’- জাতীয় কবির এই অমর বাণীর প্রতি বিশ্বাস রেখেই জিয়াউর রহমান নারীদের উন্নয়নে প্রতিষ্ঠা করেন মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়। নারীর অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থান শক্তিশালী করার লক্ষ্যেই শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান প্রথমবারের মতন দেশে মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় প্রতিষ্ঠা করেন। নারীদের স্বার্থ সংরক্ষণের একক দায়িত্ব দিয়ে ১৯৭৮ সালের ১১  ডিসেম্বর মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠিত হয়। মন্ত্রণালয় শিশুদের লালন পালনের ইস্যু সমূহের দিকেও নজর দেয়। গঠিত হয় শিশুদের স্কুল বহির্ভূত বিভিন্ন কার্যক্রমে সহায়তাদানের লক্ষ্যে বাংলাদেশ শিশু একাডেমী। নারী সমাজকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন জাতীয় মহিলা সংস্থা। পরবর্তীতে শহীদ জিয়ার আমলেই মহিলা সংস্থার অধীনে মহিলা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়।

পুুলিশ বাহিনীতে নারীদের নিয়োগ : বাংলাদেশে পুলিশ ও আনসার বাহিনীতে নারীদের প্রথমবারের মত নিয়োগ দেন শহীদ জিয়া। তিনি অনুধাবন করেছিলেন ক্রমবর্ধমান অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রশাসনের মূল ধারাতে নারীদের অংশগ্রহণ সমাজকে এগিয়ে নিয়ে যাবে। আজকে সেনাবাহিনীতে নারীরা যোগ দিচ্ছে। শুধু ডাক্তার বা নার্স হিসেবে নয়, সরাসরি যোদ্ধা হিসেবে, গোলন্দাজ বা কমিউনিকেশন ইউনিটে অফিসার হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত ১৯৮০ সালে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়া নিয়েছিলেন। ১৯৭৬ সালের ৮ মার্চ পুুলিশ বাহিনীতে নারীদের নিয়োগ শুরু হয়। বাংলাদেশের মতো মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে এটি ছিল খুবই তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত। আনসার বাহিনী ও গ্রাম প্রতিরক্ষা দলেও  নারীদের অন্তর্ভূক্ত করা হয় শহীদ জিয়ার নির্দেশেই।

দেশ পরিচালনায় নারীদের অংশগ্রহন নিশ্চিতকরণ : নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি করার জন্য এবং মহিলাদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করার লক্ষ্যে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী মহিলা দল গঠন করেন। স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি সর্বপ্রথম মহিলা রাষ্ট্রদূত ও মহিলা অডিটর জেনারেল নিয়োগ করেন। জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংখ্যা ১৫ থেকে ৩০-এ উন্নীত করেন। মহিলাদের জন্য চাকুরির ক্ষেত্রে নন-গেজেটেড পদে ১৫ শতাংশ এবং গেজেটেড পদে ১০ শতাংশ কোটা নির্ধারন করেন। শহীদ জিয়ার মন্ত্রীসভায় মহিলা মন্ত্রী ছিলেন একাধিক।

নারী কর্মক্ষেত্রের ব্যাপক প্রসার : শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে সরকারি চাকুরিতে নারীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার প্রথম ঘোষণা দেয়া হয়। রাষ্ট্রীয় চাকরিতে নারীদের জন্য ১০ শতাংশ পদ সংরক্ষিত রাখার বিধান করেছিলেন জিয়াউর রহমান। তিনিই সর্বপ্রথম ১৯৭৮ সালের ৩ই নভেম্বর সরকারি চাকুরিতে মেয়েদের প্রবেশের বয়স সীমা ২৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ৩০ বছর করেন। কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহন বাড়াতে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান যেসব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেয় সেগুলোর মধ্যে  কয়েকটি ছিল- সরাকারি প্রথমিক বিদ্যালয়সমূহে ৫০৮ জন নারী সহাকারী শিক্ষক নিয়োগ এবং ৫০ শতাংশ পদ নারীদের জন্য সংরক্ষিত করা, প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহের জন্য বর্ধিত সংখ্যায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শিক্ষক তৈরি, প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (পিটিআই) গুলোতে ১০-২৫ শয্যার নারী হোস্টেল নির্মান এবং নারী প্রশিক্ষণার্থীদের বইভাতা প্রদান। নারীদের কর্মসংস্থান পরিস্থিতির উন্নতির উপর জোর দেওয়ার ফলে ১৯৭৬ সালে সারাদেশে কর্মজীবি নারীর সংখ্যা দাড়ায় ২ কোটি ২৪ লাখ, যা ১৯৭৪ সালে ছিল ১ কোটি ৯২ লাখ।

খেলাধুলায় নারীদের অংশগ্রহন :  নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নে আরো একটি মাইলফলক হচ্ছে বাংলাদেশে মেয়েদের ফুটবল খেলাতে আনুষ্ঠানিক ও প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দিয়েছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া। মূলতঃ তাঁর সময় থেকেই মেয়েদের আন্তঃস্কুল ফুটবল টুর্নামেন্ট চালু হয়।

যৌতুক বিরোধী আইন প্রনয়ণ : শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের আমলে দেশে প্রথম যৌতুক বিরোধী আইন পাশ করা হয়। সমাজে নারীদের নিরাপত্তা এবং সামাজিক অবস্থান শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ১৯৮০ সালের ১২ই ডিসেম্বর দেশে যৌতুক বিরোধী আইন পাশ করা হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন যে, একাত্তরে সদ্য স্বাধীন দেশ ও পচাত্তরে বাকশাল থেকে মুক্ত বিধ্বস্ত একটা জনপদকে বিশ্বের মানচিত্রে মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ের মতো নারীদের অংশগ্রহন। আর এই উপলব্ধি বাস্তবায়ন করতে পেরেছিলেন বিধায় আজকের বাংলাদেশে সরকারের সর্বোচ্চ পদ থেকে শ্রমজীবীদের কাতারে সর্বত্র, এমনকি সমাজের সর্বস্তরে মেয়েদের নির্ভীক পদচারণা নিশ্চিত হয়েছে। একেই বলে নেতৃত্বের কারিশমা এবং দূরদর্শীতা। পৃথিবীতে বাংলাদেশের মানচিত্র যতদিন থাকবে ততদিন ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের নাম। তিনি মরেও আমাদের মাঝে অমর।

অধ্যাপক ড. আবুল হাসনাত মোহাঃ শামীম ও আশরাফুল ইসলাম খান আনিক

জিয়া লাইব্রেরী অনলাইন
Logo