জিয়ার ঘোষণা : মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা

জিয়া লাইব্রেরি ডেস্ক :দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের চূড়ান্ত রূপ ছিল আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সূচনা। ২৫ মার্চ ১৯৭১ রাতে জিরো আওয়ারে পাকিস্তানি সামরিক জান্তার ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর আকস্মিক গণহত্যা আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বেরও ছিল কল্পনাতীত। ১ মার্চ ১৯৭১ থেকে ২৫ মার্চের সেই কালরাতের হত্যাযজ্ঞের এ ক’দিনের আন্দোলন সংগ্রামের কিছু উল্লেখযোগ্য ঘটনা এখানে বিশেষভাবে প্রণিধানযোগ্য।
ইয়াহিয়া খান ৩ মার্চে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিল করেন ১ মার্চ । স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ থেকে ঢাকার পূর্বাণী হোটেলে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল সভায় উপস্থিত নেতৃত্বের কাছে দাবি করা হয়, শেখ মুজিব যেন তাৎক্ষণিকভাবে পূর্ব বাংলার স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বের ঘোষণা দেন। সেখানে পোড়ানো হয় পাকিস্তানের জাতীয় পতাকা। ২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয়, তৎকালীন ডাকসুর ভিপি আ স ম আবদুর রব প্রথমবারের মতো স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করেন। ৩ মার্চ ১৯৭১ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ডাকে পল্টন ময়দানের বিশাল জনসমুদ্রে স্বাধীনতার ইশতেহার পাঠ করা হয় এবং ‘আমার সোনার বাংলা’কে জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে পরিবেশন করা হয়। ৭ মার্চ রমনা রেসকোর্স ময়দানের জনসমুদ্রে বঙ্গবন্ধু দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে ঘোষণা দেন, ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’ ৯ মার্চ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ তাদের স্বাধীনতার ঘোষণাকে অনুমোদন দিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রতি জাতীয় সরকার গঠনের আহ্বান জানায়। একই দিন ঐতিহাসিক পল্টন ময়দানে মওলানা ভাসানী এবং আতাউর রহমান খান স্বাধীনতার ঘোষণা দেন। ১০ মার্চ আতাউর রহমান খান অবিলম্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রস্তাব দেন বঙ্গবন্ধুকে। ১৫ মার্চ ইয়াহিয়া খান ঢাকায় আসেন। ১৬ মার্চ থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত শেখ মুজিবুর রহমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ইয়াহিয়া খানের সাথে আলোচনা চালিয়ে যান। ২৩ মার্চ ছিল পাকিস্তান দিবস। সেদিন পল্টন ময়দানে জয়বাংলা বাহিনীর পক্ষ থেকে অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশের স্বাধীনতা প্যারেড। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ নেতারা জাতীয় পতাকা প্যারেডে সালাম গ্রহণ করেন এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করেন। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের নেতৃত্বে ১০ প্লাটুন জয়বাংলা বাহিনী ব্যান্ডের তালে তালে প্যারেড করে শেখ মুজিবের বাসভবনে গিয়ে সেখানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে। ২৫ মার্চ ছিল ২৫তম দিনের মতো সারা দেশে হরতাল। ২৬ মার্চও ডাকা হয়েছিল দেশব্যাপী হরতাল। শেখ মুজিবের পক্ষ থেকে তখনো পর্যন্ত ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ কিন্তু স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আদায় করতে সমর্থ হয়নি।
সংবিধানে মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গ
রাষ্ট্রপতি জিয়ার শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অনুযায়ী সংবিধানের প্রস্তাবনায় পরিবর্তন আনা হয়েছিল এভাবে- ‘দ্বিতীয় তফসিল (Second Schedule)’ ১. সংবিধানের প্রারম্ভে, প্রস্তাবনার উপরে নিম্নরূপ সন্নিবেশিত হইবে : ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু আল্লাহর নামে)’।
২. প্রস্তাবনায়- (১) প্রথম অনুচ্ছেদে, ‘জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধের’ শব্দগুলো প্রতিস্থাপিত হইবে; এবং (২) দ্বিতীয় অনুচ্ছেদের পরিবর্তে নিম্নরূপ দ্বিতীয় অনুচ্ছেদ প্রতিস্থাপিত হইবে : ‘আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল সর্বশক্তিমান আল্লাহর উপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র এবং সমাজতন্ত্র অর্থাৎ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিচারের সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।’
(সর্বশেষ সংশোধনীসহ মুদ্রিত গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান, অক্টোবর, ২০১১ পৃষ্ঠা ২১৫)
শেখ হাসিনার শাসনামলে সর্বশেষ সংশোধনী অনুযায়ী বর্তমানে চালু সংবিধানের প্রস্তাবনার উপরে লেখা রয়েছে, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম (দয়াময়, পরম দয়ালু, আল্লাহের নামে)/পরম করুণাময় সৃষ্টিকর্তার নামে)। প্রস্তাবনায় এখন রয়েছে : আমরা, বাংলাদেশের জনগণ, ১৯৭১ খ্রিষ্টাব্দের মার্চ মাসের ২৬ তারিখে স্বাধীনতা ঘোষণা করিয়া জাতীয় মুক্তির জন্য ঐতিহাসিক সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত করিয়াছি;
আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল- জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে। (পূর্বোক্ত পৃষ্ঠা-১)
পঞ্চম সংশোধনীতে ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য ঐতিহাসিক যুদ্ধ’ বলতে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধকেই বোঝানো হয়েছে। ‘জাতীয় স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে আত্মনিয়োগ বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে’ বলতে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়া মুক্তিযোদ্ধাদের এবং ‘শহীদ’ বলতে ন’মাসের মুক্তিযুদ্ধে বীর শহীদদের বোঝানো হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধানে ফিরে যাওয়ার কথা বলে বর্তমান সংশোধিত সংবিধান মুক্তিযুদ্ধের ফলে অর্জিত স্বাধীনতাকে জাতীয় মুক্তিসংগ্রামের ফসল বলে গণ্য করেছে। ‘মুক্তিসংগ্রাম’ আর ‘মুক্তিযুদ্ধ’ সমার্থক কি না তা ভাষাবিদ, পক্ষপাতহীন নির্মোহ ঐতিহাসিক এবং আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারাই ভালো বলতে পারবেন। সংবিধান কোনো অপরিবর্তনশীল ধর্মগ্রন্থ নয়, আসমানি কিতাবও নয়। ক্ষমতাসীনদের দ্বারা রচিত শাসনতন্ত্র। সর্বশেষ সংশোধনীর প্রস্তাবনায় মুক্তিযোদ্ধাদের এবং মুক্তিযুদ্ধের সম্মান ও স্বীকৃতি বাড়ল কী কমল, তা মূল্যায়নের ভার সম্মানিত পাঠকদের বিবেচনায় ছাড়া হলো।
বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা
এ সংবিধানের ষষ্ঠ তফসিলে [১৫০(২) অনুচ্ছেদ] জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাত শেষে অর্থাৎ ‘২৬ মার্চ’ প্রথম প্রহরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক প্রদত্ত স্বাধীনতার ঘোষণা (অনূদিত) শিরোনামে বলা হয়েছে, ‘ইহাই হয়তো আমার শেষ বার্তা, আজ হইতে বাংলাদেশ স্বাধীন। আমি বাংলাদেশের জনগণকে আহ্বান জানাইতেছি যে, যে যেখানে আছ, যাহার যাহা কিছু আছে, তাই নিয়ে রুখে দাঁড়াও, সর্বশক্তি নিয়ে হানাদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করো। পাকিস্তানি দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটিকে বাংলার মাটি হইতে বিতাড়িত না করা পর্যন্ত এবং চূড়ান্ত বিজয় অর্জন না করা পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাও।’
দুর্ভাগ্য এ ঘোষণাটি তিনি স্বকণ্ঠে আন্দোলনরত সংগ্রামী জনতাকে শুনিয়ে যেতে পারেননি। এটা নাকি ছিল একটি টেলিগ্রাফ মেসেজ। দাবি করা হয়ে থাকে, এ বার্তা তিনি তৎকালীন ইপিআরের ওয়্যারলেসের মাধ্যমে চট্টগ্রামে পাঠিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছে। বাস্তবতা ছিল ২৫ মার্চ, একাত্তরের রাতে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয় এবং পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। ২৬ মার্চ জিরো আওয়ারে পাকিস্তান বাহিনী ইতিহাসের জঘন্যতম ‘অপারেশন সার্চলাইট’-এর ধ্বংসযজ্ঞ শুরু করে দেয় বাঙালি আনসার, পুলিশ, তৎকালীন ইপিআর সেনাবাহিনী এবং নিরস্ত্র জনতার ওপর। আকস্মিক এ নির্মম হত্যাযজ্ঞের শিকার বাংলাদেশীরা নিজেরাই প্রতিরোধ যুদ্ধের সূচনা করেন।
মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা
২৭ মার্চ ১৯৭১, তৎকালীন ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান চট্টগ্রামের কালুরঘাটে অবস্থিত স্বাধীনবাংলা বেতারকেন্দ্র থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা দেনÑ “I Major Zia, provisional commander in chief of Bangladesh Liberation Army, hereby proclaims, on behalf of Sheikh Mujibur Rahman, the independence of Bangladesh. I also declare, we have already framed a sovereign, legal government under Sheikh Mjuibur Rahman, which pledges to function as per law and the constitution. The new democratic government is committed to a policy of non-alignment in international relations. It will seek friendship with all nations and strive for international peace. I appeal to all governments to mobilize public opinion in their respective countries against the brutal genocide in Bangladesh. The government under Sheikh Mujibur Rahman is sovereign legal Government of Bangladesh and is entitled to recognition from all democratic nations of the world.”
(বাংলাদেশ লিবারেশন আর্মির প্রভিশনাল কমান্ডার ইন চিফ হিসেবে আমি মেজর জিয়া শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিচ্ছি। আমি আরো ঘোষণা করছি যে, আমরা ইতিমধ্যেই শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সার্বভৌম, বৈধ সরকার গঠন করেছি যা আইন এবং সংবিধান অনুযায়ী কাজ করতে বদ্ধপরিকর। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন এই গণতান্ত্রিক সরকার জোট নিরপেক্ষ নীতির প্রতি অবিচল আস্থা রাখবে। এ সরকার সকল রাষ্ট্রের সুসম্পর্ক কামনা করে এবং আন্তর্জাতিক শান্তির জন্য প্রয়াস চালাবে। বাংলাদেশে সংঘটিত নির্মম হত্যাযজ্ঞের বিপক্ষে স্ব স্ব দেশে জনমত গঠনের জন্য সকল সরকারের প্রতি আমি আহ্বান জানাচ্ছি। শেখ মুজিবুর রহমানের অধীনে গঠিত এ সরকার সার্বভৌম আইনসম্মত এবং পৃথিবীর সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি পাওয়ার অধিকার রাখে।)
(সূত্র : ভারতীয় ‘দ্য হিন্দু’র ন্যাশনাল ম্যাগাজিন ‘ফ্রন্ট লাইন’ জুলাই ১৯- আগস্ট ০১, ২০০৩ সংখ্যায় প্রকাশিত প্যানসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ডেভিড লুডেনের নিবন্ধ ফরগটেন হিরোস।’)
৩০ মার্চ ১৯৭১ জিয়াউর রহমান স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের সংগ্রামরত জনগণের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার জন্য বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়ে নিরস্ত্র বাংলাদেশী জনগণের ওপর পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা বন্ধের আবেদন জানান। তিনি বলেন, “I once again request the United Nations and the big powers to intervene and physically come to our aid. Delay will mean massacre of additional millions.” (আমি আবারো জাতিসংঘ ও বৃহৎ শক্তিবর্গের প্রতি হস্তক্ষেপ এবং কার্যকরভাবে আমাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার জন্য অনুরোধ করছি। এ বিষয়ে বিলম্ব আরো লক্ষ লক্ষ প্রাণহানি এবং ধ্বংসযজ্ঞের কারণ হতে পারে। (পূর্বোক্ত)।
২৭ মার্চ, ১৯৭১ মেজর জিয়ার স্বাধীনতার ঘোষণা ও সরকার গঠনের ঘোষণাটি তৎকালীন রাজনৈতিক নেতৃত্বের তরফ থেকে স্বীকৃতি মেলে ১০ এপ্রিল ১৯৭১। মুজিবনগর সরকারের জারিকৃত স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয় ‘যেহেতু বাংলাদেশের জনগণ তাহাদের বীরত্ব, সাহসিকতা ও বিপ্লবী উদ্দীপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভূখণ্ডের ওপর তাহাদের কার্যকর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করিয়াছে, সেহেতু আমরা বাংলাদেশের নির্বাচিত প্রতিনিধিগণ, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ক্ষমতার অধিকারী জনগণ কর্তৃক আমাদিগকে প্রদত্ত কর্তৃত্বের মর্যাদা রক্ষার্থে, নিজেদের সমন্বয়ে যথাযথভাবে একটি গণপরিষদরূপে গঠন করিলাম এবং পারস্পরিক আলোচনা করিয়া এবং বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিত করণার্থে সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্ররূপে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা ঘোষণা করিলাম এবং তদ্বারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ইতিপূর্বে ঘোষিত স্বাধীনতা দৃঢ়ভাবে সমর্থন ও অনুমোদন করিলাম, …।’
(বর্তমান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান পৃষ্ঠা ১৫৫)
স্বাধীনতার ৪৩ম বর্ষে পদার্পণ করেও আমরা মুক্তিযুদ্ধের কাঙ্খিত ফসল ঘরে তুলতে পারিনি। যে মহান জাতীয় ঐক্য আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনকে মুক্তিযুদ্ধের সূচনাপর্বে উপনীত করেছিল, মেজর জিয়াউর রহমানের ইথারে ভেসে আসা মুক্তিযুদ্ধের যে বজ্রকণ্ঠ ঘোষণা ঐক্যবদ্ধ মুক্তিকামী মানুষের কাছে আলোকবর্তিকা হয়ে দেখা দিয়েছিল, প্রেরণা জুগিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের, রাজনীতিকদের ক্ষমতা লিপ্সা আর বিত্ত বৈভব স্ফীতকরণের অনৈতিক কলাকৌশলের যুপকাষ্ঠে সে জাতীয় ঐক্য আজ বলি হয়ে গেছে। বাংলাদেশের জনগণের জন্য সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার নিশ্চিতকরণের যে প্রত্যয়ের ঘোষণার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতার ঘোষণা দেয়া হয়- জনগণই বলুক, মুক্তিযুদ্ধের এ চেতনার বাস্তবায়নের কি কোনো আলামত এখন জাতীয় জীবনে দৃশ্যমান?

জিয়া লাইব্রেরী অনলাইন
Logo