স্বাধীনতাযুদ্ধে জিয়ার কিছু মাইলফলক : পর্ব- ২

জিয়া লাইব্রেরি ডেস্ক : আজকে তার হটাৎ সেই বুড়ির কথা মনে পড়েছে। কেমন আছে সেই বৃদ্ধা মানুষটি? বেঁচে আছে তো! বুড়ির সেই কুড়ে ঘর দিয়ে হয়তো বৃষ্টির ফোটা এখনো পরে, শীতের রাতে হার কাপানো হাওয়া হয়তো এখনো বহে ।

জিয়া সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি বুড়ির কাছে যাবেন, যে কথা দিয়েছিলেন সেই কথা রাখবেন। কিছুদিন পর অনেক ব্যস্ততার মাঝেও সেই বুড়ির সাথে দেখা করতে চলে গেলেন মানবতার এই নায়ক ।

বুড়ির কাছে পৌঁছে তাকে পা ছুয়ে সালাম করতে গেলে, বুড়ি তাকে বুকে জড়িয়ে ধরলো। জিয়ার চোখে তখন জল জমেছিল কিনা জানা হয় নি, তিনি কালো চশমার আড়ালে তার আবেগ লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসতেন।

বুড়ির দুই হাত ধরে দোয়া চাইলেন রাষ্ট্রপতি জিয়া।

বুড়ি ততদিনে একেবারেই অন্ধ হয়ে গিয়েছে। অন্ধ চোখে হাতড়ে জিয়াকে স্পর্শ করে বুড়ি বললেন-

তুমি জয়ী হও বাবা।

সেবার আসার সময় জিয়া কথা দিয়েছিলেন তিনি আবার আসবেন । এর পর দুটি বছর পার হয়ে গেছে । রাত শেষে সকাল হয়, বুড়ি পথ চেয়ে থাকে তার ছেলে জিয়া আবার কবে আসবে!

এমনি এক সকালে বুড়ি যখন শুনতে পেলো তার দেশপ্রমিক এই সন্তানকে গুলি করে মেরে ফেলেছে কিছু লোক, তখন দু হাতে বুক চাপরে বুড়ি চিৎকার করছিলো

“ইয়া আল্লাহ্ ইয়া আল্লাহ্‌ …

“ইয়া আল্লাহ্ ইয়া আল্লাহ “—– এটাই ছিল বুড়ির শেষ কথা । ইয়া আল্লাহ্ বলেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন, লুটিয়ে পড়েন মাটিতে।

বুড়ির মত এমন লক্ষ কোটি মানুষের মনের গভীরে বেঁচে আছে দেশের শ্রেষ্ঠ এই ক্ষণজন্মা সৈনিক।

প্রতিবার তিনি ফিরে এসেছেন দেশের মানুষের বিপদে। তাকে এই দেশ, এই মাটি ভুলে যাবে? নাহ.. কোনদিনও না।

তোমার আদর্শ, তোমার বোধকে বুকে বেঁধে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ, তোমার দেখানো পথে একদিন আবারো জেগে উঠবে আমার বাংলাদেশ…

৪) খোদ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক কতৃক জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণার স্বীকৃতি

স্বাধীন বাংলাদেশে জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা ঘোষণাকে রাজনৈতিকভাবে প্রথম স্বীকৃতি দিয়েছিল, খোদ আওয়ামী লীগ। ১৯৭২ সালের ৭-৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও অস্থায়ী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজুদ্দীন আহমদের আওয়ামী লীগের কাউন্সিল রিপোর্টে বলেন –

“আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে চট্টগ্রামে সশস্ত্র সংগ্রামরত মেজর জিয়াউর রহমান বেতার মারফত বঙ্গবন্ধুর পক্ষ থেকে স্বাধীনতার ঘোষণা প্রচার করেন এবং বাংলাদেশে গণহত্যা রোধ করতে সারা পৃথিবীর সাহায্য কামনা করেন।”

15609004_1834261313525736_1106694892_o-1

১৯৭২ সালের ৭-৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক তাজউদ্দিন আহামদের রিপোর্ট। ছবি – মুজতবা খন্দকার ।

আজকের বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্বীকার করুক বা না করুক, মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক ও ৭১ এ যুদ্ধ চলাকালীন মূল রাজনৈতিক নেতা তাজউদ্দীন আহাম্মেদের এই স্বীকৃতি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ জিয়ার অবস্থান নিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থানকে ডাবলস্টান্ডার্ড প্রমাণ করার জন্য যথেষ্ট। উক্ত কাউন্সিলে ছাপা কার্ডের একটি কপি এখানে দিচ্ছি , আগ্রহীরা দেখে নিতে পারেন, সংগ্রাহক  যারা সংগ্রহে রাখতে পারেন।

৫) ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ জিয়ার দেয়া নাম ছিল

“আমার রক্ত ঝরা দিন” গ্রন্থে বেগম মুশতারী শফি লিখেছেন –

“একাত্তরের ‘স্বাধীন বাংলা বেতার’ এর নামকরণের সাথে ‘স্বাধীনতার ঘোষক’ জিয়াউর রহমানের অসাধারন ভূমিকা ছিলো। আবুল কাশেম সন্দীপ, বেলাল মোহাম্মদরা প্রতিষ্ঠা লগ্নে এই বেতারের নাম দিয়েছিলেন ‘স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র’। জিয়া এই বেতারের সাথে যুক্ত হওয়ার পর নিজ উদ্যোগে ‘বিপ্লবী’ শব্দটি বাদ দিয়ে ‘স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র’ নামকরণ করেছিলেন।”

মেজর জিয়া, মুক্তিযোদ্ধা জিয়া, জেড ফোর্সের জিয়া, সেনাপ্রধান জিয়া, প্রেসিডেন্ট জিয়া বা শহীদ জিয়া যে নামেই  জিয়াকে বিশেষায়িত করতে চাইবেন দেখবেন যা কিছু ভালো, যা কিছু মঙ্গলময়, যা কিছু মাতৃভূমির স্বপক্ষে , তাঁর সবকিছুতেই অঙ্গাঅঙ্গী ভাবে প্রাণ সঞ্চারণে অগ্রভাগে ছিলেন জিয়াউর রহমান। জিয়ার মত মানুষদের জন্য ‘ক্ষণজন্মা পুরুষ’ শব্দটি যেন আপন আলোতে উদ্ভাসিত হয়েছে।

  • লেখক গবেষক ও ইন্টারনেট এক্টিভিস্ট।

জিয়া লাইব্রেরী অনলাইন
Logo