জিয়া লাইব্রেরি ডেস্ক :বিএনপি চেয়ারপাসন খালেদা জিয়ার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের নানা দিক নিয়ে সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ’র লেখা ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ, হার স্টোরি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়েছে।
রোববার (১৮ নভেম্বর) বিকেলে রাজধানীর গুলশানের হোটেল লেকশোরে এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা বইটির মোড়ক উন্মোচন করা হয়।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘনিয়ে আসার আগ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে নির্মিত ‘হাসিনা: আ ডটারস টেল’ প্রামাণ্যচিত্র মুক্তির একদিন পর কারাবন্দি খালেদা জিয়াকে নিয়ে লেখা বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হলো।
নির্বাচনের আগে ‘হাসিনা: আ ডটারস টেল’ মুক্তি নিয়ে তীব্র সমালোচনা ও ইসির নিরেপক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল বিএনপি। তবে ‘বেগম খালেদা জিয়া: হার লাইফ, হার স্টোরি’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত যাননি মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান নিহত হওয়ার পর রাজনীতিতে আসেন খালেদা জিয়া। ক্যান্টনমেন্টে জন্ম নেওয়া বিএনপির গণমানুষের দল হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার ক্ষেত্রে খালেদা জিয়ার অবদান সবচেয়ে বেশি বলে মনে করা হয়। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়ার মধ্য দিয়ে জনমানুষের নেত্রীতে পরিণত হন বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৯১ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নির্বাচনে জয়ী হলে বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হন নির্বাচিত তিনি।
২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোট বিপুল বিজয় অর্জন করলে আরেক দফা প্রধানমন্ত্রী হন খালেদা জিয়া। এর আগে অবশ্য ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির একতরফা নির্বাচনে কয়েক দিনের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। এরপর বহু চড়াই-উৎড়াই পেরিয়ে দীর্ঘকাল বিএনপিকে নেতৃত্ব দিয়ে চলছেন খালেদা জিয়া। বর্তমানে দুর্নীতির দুই মামলায় দণ্ডিত হয়ে গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দি তিনি।
মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে বইয়ের লেখক মাহফুজ উল্লাহ বলেন, ‘খালেদা জিয়া বিধবা হওয়ার পর তার পুরো জীবন দেশ ও দেশের মানুষের জন্য নিবেদন করেছেন। তিনি বাংলাদেশের মানুষের কাছে বাতিঘর হিসেবে দাঁড়িয়ে আছেন। বেগম জিয়া হচ্ছেন বাংলাদেশের রাজনীতির একজন বংশীবাদক। বইটি পড়লে পাঠকরা বুঝবেন, এই বইটি হচ্ছে মোহিনী নেতৃত্ব এবং গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামের একমন্যতা।’
বইটির ওপর আলোচনা করতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল বলেন, ‘বাংলাদেশের আত্মমর্যাদার সিনোনিম হচ্ছেন খালেদা জিয়া। আমাদের এখানে পলিটিক্যাল সেনসিভিটি এত বেশি যে কেউ যদি খালেদা জিয়া সম্পর্কে একটা ভালো কথা বলেন, তাহলে ধরেই নেওয়া হয় তিনি বিএনপি। কেউ জিয়াউর রহমানকে ভালোবাসলে বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসতে পারবেন না।’
‘এমন মনমানসিকতা নিয়েই আমরা বসবাস করি। আকাশকে বাদ দিয়ে কি মেঘকে ভালোবাসা যায়? যারা মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিলেন, তাদের সবাইকে মূল্যায়ন করতে সমস্যা কোথায়,’— বলেন আসিফ নজরুল।
সাংবাদিক নুরুল কবীর বলেন, ‘খালেদা জিয়ার প্রশংসার বড় একটা জায়গা হলো— ভারত তাকে বিশ্বাস করে না। এখন পর্যন্ত তার দলের বহু নেতা গোপনে, প্রকাশ্যে ভারতের সঙ্গে মীমাংসার চেষ্টা করছেন। এত কিছুর পরও ভারত এই ভদ্র মহিলাকে (খালেদা জিয়া) বিশ্বাস করে না। এ জন্যই খালেদা জিয়া প্রসংশার দাবিদার।’
‘কারণ, স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের রাজনৈতিক, সামাজিক অগ্রগতির পথে প্রধানতম বাধা ভারত। সেই ভারত যে মানুষটাকে অবিশ্বাস করে, সেই মানুষটা সত্যিকার অর্থে বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক,’— বলেন নুরুল কবীর।
অন্যদের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন সাবেক রাষ্ট্রদূত এম আনোয়ার হাশিম, কলামিস্ট ইফতেদার আহমেদ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লায়লা এন ইসলাম।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, সৈয়দ কামালউদ্দিন, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক আ ফ ম ইউসুফ হায়দার, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ, নির্বাহী সদস্য তাবিথ আউয়াল, মহিলা দলের সহসভাপতি জেবা খানসহ অন্যরা।
ইংরেজি ভাষায় লেখা বইটি প্রকাশ করেছে দ্য ইউনিভার্সেল একাডেমি। ৭১৮ পৃষ্ঠার এই বইয়ের দাম ধরা হয়েছে ২ হাজার টাকা।